পটনা: বিজেপি-র সঙ্গে তাঁর বনিবনা হচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছিল কয়েক মাস ধরেই। তাই বলে নীতীশ কুমার (Nitish kumar) একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন, তা নিয়ে ধন্দ ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার তেমনটাই করে দেখালেন সংযুক্ত জনতা দলের প্রধান নীতীশ। এর নেপথ্যে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (RJD) কুলপতি তথা নীতীশের প্রাক্তন জোটসঙ্গী লালুপ্রসাদ যাদবের (Lalu Prasad Yadav) ভূমিকা অনস্বীকার্য বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শোনা যাচ্ছে, মাস খানেক আগেই লালুর সঙ্গে দেখা করেন নীতীশ। তখন থেকেই ধাপে ধাপে লক্ষ্যে এগোতে শুরু করেন তিনি (Bihar Politics)।
একমাস আগে থেকে চিত্রনাট্য লেখা চলছিল!
জেলে থাকুন বা হাসপাতালে, বিহারের রাজনীতিকে এখনও লালু অনেকাংশেই পরিচালিত করেন করেন বলে মত রাজ্যের রাজীনতিকদের একাংশ। নীতীশের সঙ্গে ভাঙা জোট জোড়াতেও তাঁর হাত রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। জুলাই মাসে লালুর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পটনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাঁকে। সেই সময় তাঁকে দেখতে ছুটে যান নীতীশ। এমনকি সরকারি খরচেই লালুর চিকিৎসা হবে বলে হাসপাতাল থেকে বেরনোর পথে জানিয়েও দেন নীতীশ।
সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার বিহারে যা ঘটল, পটনার বেসরকারি ওই হাসপাতালেই তার পটভূমি রচিত হয়। কারণ তার পর ৩০ দিন কাটতেই বিজেপি-র সঙ্গ ছেড়ে ফের আরজেডি-র হাত ধরলেন নীতীশ। শুধু তাই নয়, যে তেজস্বীর জন্য জোট ভেঙে বেরিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন পাঁচ বছর আগে, সেই তেজস্বীকেই ফের উপমুখ্যমন্ত্রী করতে চলেছেন। এমনকি ২০১৭-র কথা ভুলে নতুন করে যাত্রা শুরু করতে তেজস্বীকে তিনি অনুরোধও জানান বলে বিবৃতি প্রকাশ করেছ আরজেডি।
আরও পড়ুন: Bihar Political Crisis: ‘বিজেপি শুধু বিভেদ তৈরি করতে জানে’, বললেন তেজস্বী, ফিরছে ‘চাচা-ভাতিজা’ সরকার
সেই সময় নীতীশের লালুকে দেখতে যাওয়ার মধ্যে বিহারে সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখতে পাননি কেউ। বরং দীর্ঘদিন একই পেশায় থাকায় সতীর্থের প্রতি নীতীশের সহমর্মিতাই প্রকাশ পেয়েছিল। যে কারণে সরকারি খরচে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে বেসরকারি ওই হাসপাতাল থেকে লালুকে দিল্লির এমস-এও পাঠান নীতীশ। কিন্তু তা-ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অঙ্গ ছিল বলে শোনা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, লালু যে সময় এমস-এ ভর্তি ছিলেন, সেই সময় সেখানে নিয়মিত চেকআপ করাতে যেতে শুরু করেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতন রাম মাঝিও। এর পর একে একে আরজেডি, জেডিইউ, বাম এবং কংগ্রেসের নেতাদের আনাগোনা বাড়ে এমস-এ। পটনা থেকে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন নীতীশের দলের লোকজন। আর এমনস-এ বসেই লালু বিহারে রাজনৈতিক পরিবর্তনের চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন বলে সূত্রের খবর।
বিহারের রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দিলেন লালুই!
তাই এ দিন ইস্তফা জমা দেওয়ার পর নীতীশ যখন সোজা পটনায় রাবড়ি দেবীর বাড়িতে উপস্থিত হন, সেই সনয় ট্যুইটারে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করতে দেখা যায় লালুকন্যা রোহিনী আচার্যকে। বাবাকে ‘কিংমেকার’ বলে উল্লেখ করে তিনি লেখেন। ‘রাজতিলকের প্রস্তুতি শুরু করে দিন। লণ্ঠনবাহকরা (আরজেডি-র নির্বাচনী প্রতীক লণ্ঠন) এগিয়ে আসছেন’। এর পর বাবার ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘আকাশের থেকেও উঁচু ওঁর ন্যায়পরায়ণতা, জনতা-জনার্দনের গর্ব উনি’।
লালুকন্যা রাজলক্ষ্মী যাদবও বাবার একাধিক ছবির কোলাজ পোস্ট করে লেখেন, ‘‘শঙ্খ বাজাও। আগে ডানা দিয়েছিলেন, এ বার উড়তেও শেখাবেন। চাণক্য মানেই বিহার, বিহারি মানেই চাণক্য। ভুয়ো চাণক্যগিরি বিহারের বাইরে চলুক। বিহার বলছে, তেজস্বী ভবঃ সরকার’।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ রাজনৈতিক কেরিয়ারে পাঁচ বার পক্ষ বদল করেছেন নীতীশ। তার জন্য প্রকাশ্যে একাধিক বার তাঁকে ‘পল্টুরাম’ বলে কটাক্ষ করেন লালু। লালুর থেকে সেই কটাক্ষ ধার করতে দেখা যায় আরও অনেককে। সেই ‘পল্টুরাম’কে লালুই ফের পথ দেখালেন বলে মনে করছেন বিহারের বিজেপি বিরোধী শিবিরের নেতারা।