পটনা: ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছিল কয়েক মাস আগে থেকেই। মঙ্গলবার তাতে সিলমোহর পড়ল আনুষ্ঠানিক ভাবে। বিজেপি-র (BJP) সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফের তাঁদের দুয়ারে এসে পৌঁছেছেন নীতীশ কুমার (Nitish Kumar)। তাঁর সঙ্গে রাজভবনে গিয়ে বিকেলেই সরকার গঠনের প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। আর তার পরই বিজেপি-কে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করলেন লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তথা এই মুহূর্তে বিহারে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের হর্তাকর্তা তেজস্বী যাদব (Tejashwi Yadav)। তাঁর সাফ কথা, ‘‘সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে বিজেপি শুধু মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করতে জানে। শরিক দলগুলির সঙ্গে ওরা কেমন আচরণ করে দেখুন। সকলকে নির্মূল করে দিতে চায় ওরা। পঞ্জাব দেখুন, মহারাষ্ট্র দেখুন। বিহারেও তেমনই করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমরা চাইনি, বিহারে বিজেপি-র অ্যাজেন্ডা প্রতিষ্ঠা পাক।’’ (Bihar Political Crisis)
বিহারে ফের ‘চাচা-ভাতিজা’ সরকার!
বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এর আগেও লালুর হাত ধরে ২০১৫ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ। সে বার তাঁদের জোটসঙ্গী ছিল কংগ্রেসও। সেই সময় নীতীশের উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তেজস্বী। কিন্তু তেজস্বীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিজেপি সরব হলে, ২০১৭ সালে জোট ভেঙে বেরিয়ে ফের বিজেপি-র হাত ধরেন নীতীশ। রাতারাতি বিহারে নতুন সরকার গড়ে তোলেন। তার পর থেকে সময় বিশেষে নীতীশকে ‘দলবদলু’, ‘পল্টুরাম’ বলে খোঁচা দিয়ে এসেছেন লালু। তেজস্বীও রেয়াত করেননি। কিন্তু পুরনো তিক্ততা ভুলে নতুন ভাবে যাত্রা শুরু করতে চান নীতীশ-তেজস্বী, দু’জনই।
মঙ্গলবার নীতীশ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে ১৬৪ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। সকলে সমর্থনের চিঠিতে সই করেছেন। কখন সরকার গঠন হয়, তা এখন রাজ্যপালের হাতে।’’ বিজেপি-র সঙ্গে জোট ভাঙার প্রশ্নে নীতীশ বলেন, ‘‘আমাদের দলের সকলে জোট থেকে বেরোতে চাইছিলেন। দলের কথা আর উপেক্ষা করতে পারিনি আমি।’’ তবে পাশে দাঁড়িয়ে নীতীশের প্রশংসাই করতে দেখা যায় তেজস্বীকে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। নীতীশ কুমার, লালুজিকে ধন্যবাদ। আমরা জানি, লালকৃষ্ণ আডবানির রথযাত্রা রুখে দিয়েছিলেন লালুজি। কোনও অবস্থাতেই মাথা নোয়াব না আমরা। বিহারে বিজেপি-র অ্যাজেন্ডা চলবে না।’’ আরজেডি-র তরফে বিবিৃতিতে বলা হয়, ‘তেজস্বীর সঙ্গে দেখা করে নীতীশ তাঁকে বলেন, ‘২০১৭-য় যা ঘটেছিল, তা ভুলে নতুন যাত্রা শুরু করি আমরা’।’
নীতীশের সঙ্গে গিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব তেজস্বীর
এই মুহূর্তে বিহার বিধানসভায় আরজেডি-ই একক বৃহত্তম দল। তাদের ৭৯ জন বিধায়ক রয়েছে। নীতীশের সংযুক্ত জনতা দলের বিধায়ক সংখ্যা ৪৫। ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় ম্যাজিক সংখ্যা ২৪৩। সে ক্ষেত্রে দুই দল মিলেই সরকার গড়ার প্রয়োজনীয় ১২২ আসন হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও জোট শরিক কংগ্রেসের ১৯টি আসন রয়েছে। রয়েছে ছোটখাটো আঞ্চলিক দলগুলিও। সেই নিরিখে বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা ৭৭। নীতীশ-তেজস্বীর জোট সরকার গঠিত হলে, সেখানে বিজেপি বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবে।