নয়াদিল্লি: আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোট গড়তে তৎপর হয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিজেপি-কংগ্রেস দুই দলকে বাদ দিয়ে তৃতীয় জোট গড়ে তোলার পক্ষে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও-ও (KCR)। সেই আবহেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) আগে সবকিছু সামলে নেওয়ার আশ্বাস দিতে দেখা গেল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah)। একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, বাংলা এবং তেলঙ্গানা থেকে পরিবারতন্ত্রকে নির্মূল করেই ছাড়বেন (Dynasty Politics)।


শাহের মুখে ফের পরিবারতন্ত্র


হায়দরাবাদে বিজেপি-র জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের দ্বিতীয় দিন, রবিবার এমন মন্তব্য করেন শাহ। সাংবাদিক বৈঠক করে তঁকে উদ্ধৃত করে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মা বলেন, “পরিবারতন্ত্র, জাতপাত এবং তুষ্টিকরণের রাজনীতি সবচেয়ে বড় অভিশাপ। বছরের পর বছর তার জেরে ভুগতে হয়েছে গোটা দেশকে। কংগ্রেস রাজনীতিকে জমিদারি বলে মনে করে। কংগ্রেসের অন্দরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সদস্যরাই লড়ছেন। ভয়ে সভাপতি নির্বাচন করছে না কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গ এবং তেলঙ্গানা পরিবারবাদের রাজনীতি থেকে মুক্তি পাবে। বাংলা, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং ওড়িশায় বিজেপি-র সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।”


২০১১ সাল থেকে বাংলায় ক্ষমতায় রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সাংসদ। বৌদি কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ও সম্প্রতি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। একই ভাবে, তেলঙ্গানায় ক্ষমতায় কেসিআর। তাঁর ছেলে কেটি রামারাও রাজ্যের মন্ত্রী। মেয়ে কবিতা সাংসদ ছিলেন। এখন বিধান পরিষদের সদস্য। অন্ধ্রপ্রদেশে ক্ষমতায় রয়েছেন জগন্মোহন রেড্ডি। তাঁর বাবা ওয়াইএস রাজশেখর রেড্ডিও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। মা ওয়াই এস বিজয়াম্মাও সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। তামিলনাড়ুর ক্ষমতায় মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকেরও রাজনীতিতে পারিবারিক সংযোগ রয়েছে।


আরও পড়ুন: Maharashtra Politics: ফের ধাক্কা উদ্ধবের, অধ্যক্ষ নির্বাচনে জয়ী বিজেপি প্রার্থী


সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বেছে বেছে এই রাজ্যগুলিকে শাহ পরিবারতন্ত্র নিয়ে আক্রমণ করেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ২০১৪ সাল থেকেই লাগাতার বিজেপি নেতৃত্বের মুখে ঘুরেফিরে এসেছে এই পরিবারতন্ত্রের কথা। কিন্তু বিরোধীদের নিশানা করলেও, বিজেপি-র অন্দরে পরিবারতন্ত্র নিয়ে দলীয় নেতৃত্ব নীরব কেন প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, “বিজেপি-র বহু নেতা-নেত্রী আছেন, যাঁরা পরিবার সূত্রে রাজনীতি করেন। ক্রিকেটের জুয়ারি, মন্ত্রীর ছেলে ক্রিকেটের জুয়ারি সব আছেন। নেহরু- ইন্দিরা,-রাজীব একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। সেই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে তৎপর বিজেপি।”


বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক সংযোগের কথা বিজেপি-কে স্মরণ করে দিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। ফোনে এবিপি আনন্দকে কুণাল বলেন, “যেখানে অসম বন্যায় ভেসে যাচ্ছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে, সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী অন্য রাজ্যে বসে দলেবাজি করে চলেছেন, মানুষের পাশে নেই, এটা দেখেই বিস্মিত আমি। দ্বিতীয় হল, অমিত শাহ অসাড় কথা বলছেন। বাংলায় পুরোদস্তুর মানুষের সমর্থন নিয়ে, আশীর্বাদ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চলছে। সামনে, ডাইনে, বাঁয়ে তাকিয়ে দেখুন। কোথাও অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেড-এর সাইনবোর্ড, কোথাও সিন্ধিয়া পরিবারের। এঁদের মুখে পরিবারতন্ত্র শোভা পায়। আসলে কর্মীদের সামনে বলার কিছু নেই। তাই গোল গোল করে সেই পরিবারতন্ত্রের বুলি আউড়ে যাচ্ছেন।”


শুভেন্দু-সিন্ধিয়া মনে করালেন বিরোধীরা


সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, “বিজেপির ঘোষিত নীতি হচ্ছে, বিরোধীমুক্ত ভারত চাই। মুখে বলছে, কংগ্রেসমুক্ত ভারত। বামপন্থীদের উপর খুব রাগ ওদের। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বাসঘাতকের ভূমিকা ছিল আরএসএস-এর। স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতীয় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে কংগ্রেস। সংঘটিত আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে বামেরা। স্বাধীনতার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সংবিধানকে রক্ষা করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের।কিন্তু বিজেপি সেই দায়িত্ব অস্বীকার করছে। দেশটিকে সর্বনাশের জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।”