নয়াদিল্লি: জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি-র (BJP) মোকাবিলায় আঞ্চলিক দলগুলির যোগ্যতা নিয়েই কার্যত প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। তা নিয়ে এ বার কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীর (Rahul Gandhi) বিরুদ্ধে সরব হল তাঁদেরই এককালের শরিক তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (TRS)। তাদের দাবি, কংগ্রেস শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবতে ব্যস্ত। কংগ্রেস আসলে অপ্রাসঙ্গিক। আগামী দিনে বিরোধীরা চালিকাশক্তি হয়ে উঠলেও কংগ্রেস লেজুড় হয়েই থাকবে।
রাহুলের মন্তব্যে অসন্তোষ সব বিরোধী দলেই
আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে রাহুলের মন্তব্যে এ যাবৎ বিজেপি বিরোধী সবপক্ষই মোটামুটি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বুধবার সংবাদমাধ্যমে তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন TRS বিধানসভা পরিষদীয় সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ কে কবিতা (K Kavitha)। তাঁর বক্তব্য, “মানুষের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রয়েছে আনঞ্চলিক দলগুলির। রাহুলজির বোঝা উচিত যে মহারাষ্ট্রে আঞ্চলিক দলের কাঁধে ভর করেই মাথা তুলে রয়েছেন। বর্তমানে কংগ্রেস লেজুড় বই অন্য কিছু নয়। আগামী দিনে আঞ্চলিক দলগুলি দেশের চালিকাশক্তি হয়ে উঠলেও, কংগ্রেস লেজুড় হয়েই থাকবে।”
আঞ্চলিক দলগুলিতে নয়, কংগ্রেসেই নেতৃত্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলেও কটাক্ষ করেন কবিতা। বলেন, “বর্তমানে বেকারত্ব, সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে জেরবার দেশ। তথাকথিত জাতীয় দল কংগ্রেস এ সব তা নিয়ে রা কাড়ে না। সেই আবহে ‘চিন্তন শিবিরে’ দলকে চাঙ্গা করতে মরিয়া কংগ্রেস। তাই আঞ্চলিক দলগুলির সাফল্যে ঈর্ষান্বিত। কাজ করে সফল হয়েছি আমরা। আজ রাজ্যে সফল। আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতেও সাফল্য আসবে। কংগ্রেসের মতো নেতৃত্ব সঙ্কট নেই আমাদের।” কবিতার দাবি, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র তেলঙ্গানার মতো রাজ্যে বেকারত্বের প্রভাব পড়েনি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট। এই তিন রাজ্যে না কংগ্রেস, না বিজেপি-র সরকার। আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতেও তেমনই ঘটবে।
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) পর থেকে যত সময় এগিয়েছে, ততই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে কংগ্রেস। বর্তমানে গোটা দেশে মাত্র দু’টি রাজ্যে একার ক্ষমতায় সরকার রয়েছে তাদের, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়। সেখানেও অন্তর্দ্বন্দ্বে জেরবার গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি। পারস্পরিক বনিবনা না হওয়ায়, কথা কথায় দিল্লিতে দরবার করতে দেখা যায় প্রদেশ নেতৃত্বকে।
সেই আবহে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপি বিরোধী তৃতীয় জোট গড়ে তোলার সপক্ষেও মতামত জানাতে শুরু করেছেন অনেকে। তাই দেশের প্রাচীনতম দল হিসেবে কংগ্রেসের তরফে সকলকে একছাতার নীচে চেষ্টা করা হবে বলে ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু সম্প্রতি রাজস্থানে আয়োজিত ‘চিন্তন শিবিরে’ রাহুলের মন্তব্য অসন্তোষের আগুনে ঘি ঢালে (Opposition Alliance)।
সম্প্রতি ওই সভা থেকে ২০২৪ নিয়ে রাহুলকে বলতে শোনা যায়, “বিজেপি কিন্তু শুধু কংগ্রেসকে নিয়েই কথা বলবে, কেনও আঞ্চলিক দল নয়, কংগ্রেস নেতা, কংগ্রেস কর্মীদের কথাই ঘুরেফিরে উঠে আসবে তাদের মুখে। কারণ নিজ নিজ জায়গায় শক্তিশালী হলেও, আদর্শ না থাকায় আঞ্চলিক দলগুলির যে তাদের হারানোর ক্ষমতা নেই, সে কথা জানে বিজেপি।”
আরও পড়ুন: Hardik Patel: নেতারা শুধু মোবাইলেই মগ্ন! রাহুলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে কংগ্রেস ছাড়লেন হার্দিক
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একযোগে রাহুলের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করতে দেখা যায় আঞ্চলিক দলগুলিকে। গত আট বছরের নির্বাচনী ফলাফলের খতিয়ান তুলে ধরে কংগ্রেসকে আত্মসমীক্ষার পরামর্শ দিতে দেখা যায় বিরোধী শিবিরের নেতা-নেত্রীদের। পরিস্থিতি বিচার করে বিরোধী দলগুলিকে না রাগিয়ে, কংগ্রেসের সহযাত্রীর ভূমিকা পালন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন অনেকেই। তাতে বেকায়দায় পড়ে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হয় কংগ্রেসকে।
ড্যামেজ কন্ট্রোলে কংগ্রেস
দলের সাংসদ শশী তারুর সেই সময় জানান, রাহুল আঞ্চলিক দলগুলিকে অপমান করতে চাননি। বরং সমমনোভাবাপন্ন দলগুলিকে একছাতায় আনার কথাই বলেছেন। কিন্তু শশীর সাফাইয়ে যে কাজ হয়নি, তা কবিতার মন্তব্যেই পরিষ্কার। দীর্ঘদিন কংগ্রেসের শরিক হয়ে ইউপিএ-তে থাকলেও, ২০১৪ থেকে ‘একলা চলো’ নীতি নিয়ে চলছে TRS।