নয়াদিল্লি: বিতর্কিত PM-CM Removal Bill নিয়ে উত্তাল হল সংসদ। বুধবার লোকসভায় সংবিধান সংশোধনী বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিলটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পদে পদে বাধার মুখে পড়তে হল তাঁকে। শুধু তাই নয়, তিনটি বিতর্কিত বিলের প্রতিলিপি ছিঁড়ে কুটিকুটি করে তাঁর দিকে উড়িয়ে দিলেন বিরোধী শিবিরের সাংসদরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সেই ভিডিও। দেখা গিয়েছে, বিলটি পড়ে শোনাচ্ছেন শাহ। আর সেই সময় এদিক ওদিক থেকে তাঁর মুখের সামনে দিয়ে কাগজের টুকরো উড়ে আসছে। (Amit Shah)

বুধবার সংসদে সংবিধান সংশোধনের তিনটি বিতর্কিত বিল পেশ করেন শাহ, যাতে বলা হয়েছে, গুরুতর অপরাধ মামলায় আটক বা গ্রেফতার হলে, ৩০ দিন বন্দি থাকলেই প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে হবে। ৩১তম দিনে তাঁরা যদি পদত্যাগ না করেন, সেক্ষেত্রে  রাষ্ট্রপতি, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নর তাঁদের পদ থেকে সরাতে পারবেন। বিরোধীদের অভিযোগ, এই তালিকায় দেখনদারির জন্যই প্রধানমন্ত্রীকে রাখা হয়েছে। বাস্তবে কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাই তাঁকে ৩০ দিন আটক বা গ্রেফতার করে রাখবে না। আসলে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো বিরোধী শিবিরের মুখ্য়মন্ত্রীদের নিশানা করতেই এই বিল আনা হয়েছে। (Constitution Amendment Bill)

সেই নিয়ে শোরগোলের মধ্যেই এদিন লোকসভায় বিলটি পেশ করেন শাহ। তিনি বক্তৃতা শুরু করতেই তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। শাহকে লক্ষ্য করে স্লোগান দিতে থাকেন বিরোধী সাংসদরা। তাড়াহুড়ো করে বিলটি পাস করানোর চেষ্টা চলছে কেন প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। শাহ সেই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সংসদের যৌথ কমিটিতে বিলটি পাঠানো হবে। বিরোধীরা তাঁদের মতামত জানানোর সুযোগ পাবেন। বিরোধীদের কটাক্ষ করে শাহ আরও বলেন, "এতটাও নির্লজ্জ হতে পারি না আমরা যে গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সাংবিধানিক পদ ধরে রাখব।"

আর শাহ বিলটি পড়ার সময়ই নানা দিক থেকে কাগজ উড়ে আসতে থাকে তাঁর দিকে। বিলের প্রতিলিপি ছিঁড়ে কুটিকুটি করে তাঁর দিকে ছোড়েন বিরোধীরা।  বিরোধীরা জানান, শাহের যুক্তি একেবারেই বাস্তবসম্মত নয়। বিরোধীদের তরফে AIMIM-এর আসাদউদ্দিন ওয়েইসি, কংগ্রেসের মনীশ তিওয়ারি, কেসি বেণুগোপাল-সহ অন্যরা কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করেন। বিলটি দেশের সাংবিধানিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী বলে দাবি করেন তাঁরা। এ নিয়ে হট্টগোলের মধ্যে অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার ওম বিড়লা। শাহ জানিয়েছেন, সংসদের যৌথ কমিটির ৩১জন সদস্য বিলটি নিয়ে পরবর্তী অধিবেশনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবেন।

তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "কয়েকজন সাংসদ কাগজ ছেঁড়েন। আমি যদিও কাগজ ছিঁড়িনি। তাছাড়া এসব গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ অসাংবিধানিক একটি বিল আনা হয়েছে। ছিঁড়ে ফেলা ছাড়া আর কী করণীয়? যা হয়েছে ঠিক হয়েছে। আমি না করলেও, যাঁরা করেছেন, ঠিক করেছেন। বিলটি একেবারে অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক। সংবিধানের মূল কাঠামোর মধ্যে অন্যতম হল অনুচ্ছেদ ৭৫। সেটাকে সংশোধন করা যায় কি? ওরা মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেবে? ED-র সব মামলা ভুয়ো। মাত্র ০.৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই দোষ প্রমাণিত হয়।"

এদিন বিরোধী শিবিরের সাংসদদের আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করেন লোকসভার স্পিকার। তিনি বলেন, “মানুষ দেখছেন। তিনটি বিলে বাধা দিচ্ছেন বিরোধীরা।” যে সংসদীয় যৌথ কমিটির কাছে বিলটি পাঠানো হয়েছে, তার ২১ জন সদস্যকে লোকসভার স্পিকার মনোনীত করবেন। অন্য ১০ জনকে মনোনীত করবেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান।