নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয়মন্ত্রী থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মন্ত্রীদের নিয়ে সংসদে নতুন বিল পেশ করল নরেন্দ্র মোদি সরকার। দোষী সাব্যস্ত না হলেও, গুরুতর অপরাধ মামলায় গ্রেফতার বা আটক হলেই তাঁদের অপসারণের কথা বলা রয়েছে বিলে। সেই নিয়ে একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, নির্বাচনের ময়দানে যদি হার জোটে, সেক্ষেত্রে অন্য পথে যাতে বিরোধীদের নাস্তানাবুদ করা যায়, তার জন্যই এই বিল আনা হচ্ছে। এদিন লোকসভায় অমিত শাহ বিলটি পেশ করলে তীব্র হট্টগোল শুরু হয়। বিলের প্রতিলিপি ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান বিরোধীরা। (Amit Shah Parliament Bill Protest)
কেন্দ্রীয় সরকার যে বিল এনেছে, তাতে বলা হয়েছে, দেশের প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কোনও মন্ত্রী যদি গ্রেফতার হন এবং একটানা ৩০ দিন হেফাজতে থাকেন, সেক্ষেত্রে ৩১তম দিনে তাঁকে হয় পদত্যাগ করতে হবে, নয়ত পদ থেকে সরানো হবে। নতুন বিল অনুযায়ী, কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নরই নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে পদ থেকে সরাতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীকে সরানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। (PM-CM Removal Bill)
যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের তদন্তকারী সংস্থা দেশের প্রধানমন্ত্রীকে একটানা ৩০ দিন জেলে রাখবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। সেই নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছেন বিরোধীরাও। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘বিরোধী-সহ গোটা দেশের সমর্থন সত্ত্বেও পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্দখলের সাহস নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। দেশের সার্বভৌমিকতা, সীমান্তসুরক্ষা, শত্রুর মোকাবিলার কথা উঠলে ফাঁপা বুক চাপড়ানি শুধু। সাংবিধানিক দায়িত্বপালনের পরিবর্তে শুধুমাত্র ক্ষমতাদখল, সম্পদ আহরণ, নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায় এই সরকার। দায়বদ্ধতার বালাই নেই। এমন কর্তৃত্ববাদী আচরণের তীব্র নিন্দা করছি আমরা। মধ্যযুগীয় এই সংবিধান সংশোধনী বিলের তীব্র বিরোধিতা করছি। দেশের কৃষক, শ্রমিক, দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে ব্যর্থ ভারত সরকার, দেশের সার্বভৌমিকতা রক্ষায় ব্যর্থ’।
নির্বাচন কমিশনের অপব্যবহার করে দেশে ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধন ঘটাতে গিয়ে পদে পদে যে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রকে, তাতেই এখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে দিয়ে বিরোধীদের নিশানা করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও দাবি করেন অভিষেক। তাঁর বক্তব্য, ‘EC-কে দিয়ে SIR করাতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাই এখন আর একটি ‘E’, ED-কে সক্রিয় করে তুলতে আইন আনা হচ্ছে, যাতে বিরোধীদের নিশানা করা যায়, গণতন্ত্রের শ্বাসরোধ করা যায় এবং মানুষের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজ্যের সরকারগুলিকে ফেলে দেওয়া যায়। এই সরকার মানুষবিরোধী, কৃষকবিরোধী, দরিদ্রবিরোধী, তফসিলি জাতি, উপজাতি, অনগ্রসর শ্রেণির বিরোধী এবং সর্বোপরি ভারত বিরোধী। বিজেপি-কে একটি ভোটও দেওয়ার অর্থ দেশের আত্মাকে বিক্রি করে দেওয়া। ওদের ভোট দেওয়ার অর্থ দেশের সংবিধান বিক্রি করে দেওয়া, ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ভারতকে উগ্র স্বৈরাচারীদের হাতে তুলে দেওয়া। গাঁধী এবং অম্বেডকরের আদর্শের উপর ভিত্তি করে তৈরি ভারত, ক্ষমতালোভী স্বৈরাচারী শাসকের হাতে নিজের আত্মা সমর্পণ করবে না’।
কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা বলেন, “সম্পূর্ণ মধ্যযুগীয় আচরণ…দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থার নামে আসলে মানুষের চোখে পট্টি বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। কাল যে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর নামে কোনও অভিযোগ দায়ের করে, বিচার ছাড়াই তাঁকে ৩০ দিনের জন্য আটকে রাখতে পারেন। তাতেই আর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না তিনি? এই পদক্ষেপ অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক।”
কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভিও এই বিলের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর কথায়, “বিরোধীদের উপড়ে ফেলার সেরা উপায়। পক্ষপাতদুষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে লেলিয়ে দিয়ে বিরোধী শিবিরের মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেফতার করানো হবে। নির্বাচনে হারাতে না পারলেও, স্বেচ্ছাচারের মাধ্যমে গ্রেফতার করিয়ে সরানোর ব্যবস্থা। শাসকদলের মুখ্যমন্ত্রীদের স্পর্শ করা হবে না।” দিল্লির প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ঠিক এভাবেই সরানো হয় বলেও স্মরণ করাচ্ছেন বিরোধীরা। আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করিয়ে, বিনা বিচারে পাঁচ মাস বন্দি রেখে বিজেপি দিল্লির দখল নিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। প্রথমে পদত্যাগ না করলেও, একটা সময় পর যে কেজরিওয়াল পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং তাতেই দিল্লি আম আদমি পার্টির হাত থেকে বেরিয়ে যায়, সেকথা তুলে ধরছেন তাঁরা।
বুধবার লোকসভায় বিলটি পেশ করেছেন শাহ। কেন্দ্রের দাবি, অপরাধমুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতেই এই বিল। যদিও বিরোধীরা এর তীব্র নিন্দা করছেন। তাঁদের দাবি, সংবিধানে দেওয়া আইনের শাসন ধ্বংস করছে সরকার। সংসদের ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। কংগ্রেস, AIMIM, সমাজবাদী পার্টি, বামেরা তীব্র সামলোচনা করে বিলটির। সংসদে বলতে ওঠার পর বিরোধীদের বাধার মুখে পড়েন শাহ। শেষে তুমুল হট্টগোলের জেরে লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। শ