নয়াদিল্লি: রাজনীতির ময়দানে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হলেও, একই পরিবারের সদস্য। তা সত্ত্বেও একফ্রেমে কবে দেখা গিয়েছে, স্মরণ করতে পারবেন না কেউই। কিন্তু কেদারনাথ দর্শনে গিয়ে মুখোমুখি হলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi) এবং বিজেপি সাংসদ বরুণ গাঁধী (Varun Gandhi)। মঙ্গলবার মন্দির প্রাঙ্গনেই (Kedarnath Temple) দু'জনের সাক্ষাৎ হয় এবং খানিক ক্ষণ কথাবার্তাও হয় বলে খবর। (Gandhi Family)


সংবাদ সংস্থা পিটিআই একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, দু'জনই মঙ্গলবার কেদারনাথ মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। সেই সময়ই মুখোমুখি এসে পড়েন। সৌজন্য বিনিময়ে পিছপা হননি কেউই। অল্প ক্ষণের জন্য হলেও কথাবার্তা হয় তাঁদের মধ্যে। বরুণের মেয়েকে দেখে যারপরনাই খুশি হন রাহুল। তবে রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা হয়নি।


রাজীব গাঁধীর ছেলে রাহুল এবং সঞ্জয় গাঁধীর ছেলে বরুণ, সম্পর্কে তুতোভাই। সাংসারিক জটিলতা বোঝার বয়স হয়নি যখন, সেই সময়ই জীবনের রাস্তা আলাদা হয়ে গিয়েছিল তাঁদের। রাজনৈতিক ভাবেও প্রতিপক্ষ শিবিরের অংশ তাঁরা। শুধু মাত্র নেহরু-গাঁধী পরিবারের যোগসূত্রটুকুই রয়ে গিয়েছে।  



আরও পড়ুন: Amit Shah : বিদ্যুতের তারে জড়াল শাহের রথ, রাজস্থানে প্রচারে গিয়ে বড়সড় বিপদ এড়ালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী


কিন্তু কেদারনাথে দুই ভাইয়ের এই সাক্ষাৎ ঘিরে এই মুহূর্তে জোর জল্পনা দিল্লির রাজনৈতিক মহলে। বিশেষ করে বরুণের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণে এই সাক্ষাৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিজেপি-তে থেকেও বেশ কিছু দিন ধরেই কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে লাগাতার বিঁধে চলেছেন বরুণ। কৃষক আন্দোলন হোক বা কুনো জাতীয় অরণ্যে একের পর এক চিতার মৃত্যু, অথবা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার চুক্তি, লাগাতার কেন্দ্রের সমালোচনা করে আসছেন তিনি। বিজেপি-র কর্মসূচিতেও ইদানীং কালে তেমনন দেখা যায় না তাঁকে। তাই রাহুলের সঙ্গে তাঁর এই সাক্ষাৎ ঘিরে জল্পনা জোর পেয়েছে। 


এমনিতে পরস্পরকে নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরতই থাকেন রাহুল এবং বরুণ। সনিয়া গাঁধী এবং মানেকা গাঁধীর মধ্যেকার তিক্ততাই এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। তবে গতবছর রাহুলের কাছে জনৈক সাংবাদিক জানতে চান, বরুণকে কংগ্রেস স্বাগত জানাবে কিনা। উত্তরে রাহুল জানান, কংগ্রেসে সকলকে স্বাগত। কিন্তু বরুণ বিজেপি এবং সঙ্ঘের আদর্শে চলছেন, যার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কংগ্রেস। 






ইন্দিরা গাঁধী জীবিত থাকাকালীনই গাঁধী পরিবারের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর রাজীবের হাতে রাজনৈতিক উত্তরাধিকার সঁপে দিতে উদ্যোগী হন ইন্দিরা। কিন্তু মানেকা সঞ্জয়ের জায়গায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে, যা মনঃপুত হয়নি ইন্দিরার। লাগাতার অশান্তি, ঝামেলার মধ্যেই গাঁধী পরিবারের তৎকালীন বাসভবন ছেড়ে বেরিয়ে যান মানেকা। তার পর বিজেপি-তে যোগদান করেন। পরবর্তী কালে এক সাক্ষাৎকারে সনিয়া এবং রাজীবকেই গোটা পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেন মানেকা। জানান, সঞ্জয় জীবিত থাকাকালীন রাজনীতিতে কোনও আগ্রহই ছিল না রাজীব-সনিয়ার। কিন্তু সঞ্জয় মারা যেতেই তাঁদের কর্তৃত্ব শুরু হয়, রাজনীতিতে এবং বাড়িতেও। তাঁর তুলনায় সনিয়া বেশি গুরুত্ব পেতে থাকেন বলেও অভিযোগ করেন। তবে মানেকা সরব হলেও, কখনও এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি সনিয়া। সংসদে মুখোমুখি হলেও দুই জা পরস্পরকে বরাবর এড়িয়েই গিয়েছেন। 


তবে রাহুল এবং বরুণ বরাবরই সৌজন্য বজায় রেখেছেন। প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর বিয়েতে মানেকা না গেলেও, বরুণ ছিলেন বলে জানা যায়। নিজের বিয়েতে খোদ সনিয়াকে আমন্ত্রণ করতে গিয়েছিলেন বরুণ। কিন্তু তার পরেও রাহুল-প্রিয়ঙ্কা বা সনিয়া কাউকেই বরুণের বিয়েতে দেখা যায়নি। কিন্তু জন্মের মাত্র ২০ দিনের মাথায় যখন বরুণের প্রথম সন্তানের মৃত্যু হয়, সেই সময় রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কা তাঁর বরুণের পাশে দাঁড়াতে ছুটে যান।