বঙ্গাইগাঁও, অসম: বাবা ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের সৈনিক ছিলেন। তাঁর মেয়েকেই আদালতে (Court) যেতে হয়েছে নিজেকে ভারতের নাগরিক প্রমাণ করার জন্য। টানা ৩ বছরের আইনি লড়াইয়ের পরে অবশেষে আদালতে অসমের (Assam) বঙ্গাইগাঁওয়ের বাসিন্দা সেজে বালা ঘোষ (Seje Bala Ghosh) প্রমাণ করতে পেরেছেন যে তিনি ভারতের নাগরিক, বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী (illegal immigrant from Bangladesh) নন।


IANS-সূত্রের খবর, এই সপ্তাহেই তিনি Foreigners Tribunal (FT)-থেকে ওই আদেশের কপি হাতে পেয়েছেন। IANS- সেজে বালা ঘোষ বলেছেন, 'আমার নাগরিকত্বের জন্য় প্রশ্ন তোলা আসলে আমার বাবার দেশের জন্য আত্মত্যাগের প্রতি চরম অবমাননা। আমি এখনও অপমানিত বোধ করছি।' তিনি আরও বলেন, 'আমার বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। চন্দ্রশেখর আজাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। এই দেশের স্বাধীনতার জন্য অনেককিছু ত্যাগ করেছেন। স্বাধীনতার সাত দশক পরে তাঁর মেয়েকেই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলে দেওয়া হল। যা অত্যন্ত লজ্জার।'


অসমের বঙ্গাইগাঁওয়ের শালবাগান গ্রামের বাসিন্দা সেজে বালা ঘোষ। একাই থাকেন কৃষ্ণভক্ত সেজে বালা ঘোষ। বছর ৭৩-এর সেজে বালা ঘোষের দাবি, 'হয়তো এটা আমার হওয়ারই ছিল। কিন্তু যে আমার এই অসম্মান করেছে তাঁকে তাঁর পরিণতি ভোগ করতে হবে। কৃষ্ণ সব দেখছেন।'


IANS-কে তিনি জানিয়েছেন, ২০২০ সালের মার্চ মাসে লকডাউন শুরু কিছু আগে পুলিশ ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে একটি নোটিশ নিয়ে তাঁর বাড়ি পৌঁছেছিল। তিনি জানাচ্ছেন, 'আমি পুলিশকে বলি আমি পড়তে পারছি না। তখন ওরা বলে আমায় আদালতে যেতে হবে কারণ মনে করা হচ্ছে আমি একজন অবৈধ অভিবাসী।'


সেজে বালার ছেলে কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন, পরিবারের বাকিরা তাঁকে ত্যাগ করেছেন। এখন তাঁর পড়শিরাই তাঁর যত্ন নেন। অসমে একটি NGO রয়েছে, নাম -Citizens for Justice and Peace (CJP), অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরির সময় সে রাজ্যের বহু বাসিন্দার নাম বাদ যায়। তাঁদের আইনি সাহায্যের কাজ করে এরা। এই সংগঠনের তরফেই যোগাযোগ করা হয় সেজে বালা ঘোষের সঙ্গে।  ওই বয়স্ক মহিলার আইনি লড়াইয়ের দায়িত্ব নেন দেওয়ান আবদুর রহিম। তিনি জানিয়েছেন, রেকর্ড বলছে সেজে বালা ঘোষের বাবা দীগেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মীয় হানাহানির কারণে অসমে চলে আসেন। মঙ্গলদই জেলায় বালোগাড়া গ্রামে ১৯৫১ সালে সেজে বালা ঘোষ জন্মগ্রহণ করেন। সেই বছরেই তাঁর বাবার নাম  National Register of Citizens (NRC)-এ ওঠে। ১৯৫৪ সালে তাঁর নামে পাসপোর্ট (Passport) ইস্যু হয়। ১৯৫৮ সালে দীগেন্দ্র চন্দ্র ঘোষের নাম ভোটার তালিকায় পাওয়া গিয়েছে।' ওই আইনজীবী জানিয়েছেন যে তাঁরা অন্তত ১৩টি নথি দেখিয়েছেন এটা প্রমাণ করতে যে সেজে বালা ঘোষের পরিবার ১৯৫১ সালের আগে থেকে অসমে বসবাস করেন। দীগেন্দ্র নাথ ঘোষের মেয়ে যে সেজে বালা ঘোষ, সেই প্রমাণও আদালতে দেওয়া হয়েছিল। যা যা নথি দেওয়া হয়েছিল তার সবকটিই প্রামাণ্য় হিসেবে জানিয়েছে Foreigners Tribunal (FT), দাবি সেজেবালার আইনজীবীর। সেজে বালার মায়ের নামও ১৯৬২ সালের একটি ডোনেশন স্লিপে পাওয়া যায়। ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকায় (Voter List) পাওয়া যায়। 


এই শুনানি চলার মাঝেই পা ভেঙে গিয়েছিল বয়স্ক সেজেবালার। সেই ভাবেই হুইলচেয়ারে বসে ২০২১ সালে আদালতের সামনে যেতে হয়েছে তাঁকে। তারপরে দীর্ঘ শুনানির পরে, ৪ নভেম্বর আদালত জানিয়েছে যে সেজে বালা ঘোষ অবৈধ অভিবাসী নয়।  


FT-এর নির্দেশে বলা হয়েছে,  ১৯৮৯, ১৯৯৭, ২০০৫, ২০১১ এবং ২০২০ সালে বঙ্গাইগাঁওয়ে ভোটার তালিকায় সেজে বালার নাম পাওয়া যায়। তাঁদের ওবিসি শংসাপত্র, রেশন কার্ডও (Ration Card) দেওয়া হয়েছে। দীগেন্দ্র চন্দ্র ঘোষের মেয়ে হিসেবে প্রামাণ্য নথিও তিনি জমা দিয়েছেন, যেখানে ১৯৯৪ সালে বঙ্গাইগাঁওয়ের মিউনিসিপ্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যানের সই রয়েছে। নির্দেশের খবর শোনার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সেজেবালা ঘোষ। 


আরও পড়ুন: পেশায় ডাক্তার, শরীরচর্চাই ধ্যানজ্ঞান! তবুও ৩৩-এ থামল জীবন! কেন জানেন?