বিজেন্দ্র সিংহ, সৌভিক মজুমদার ও আশাবুল হোসেন: কয়লাকাণ্ড সংক্রান্ত মামলায় অভিষেক ও রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রক্ষাকবচ দিল না দিল্লি হাইকোর্ট।
ইডির সমনের ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানান সস্ত্রীক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মামলার পরবর্তী শুনানি সোমবার। দু’পক্ষকেই হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
কয়লাকাণ্ডে ইডি-র সমনে, অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন অভিষেক ও রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, মঙ্গলবার সেই মামলায় ইডির সমনের ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল না দিল্লি হাইকোর্ট।
দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের পরে মুলতুবি হয়ে গেল শুনানি। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী সোমবার। সেদিন দু’পক্ষকে হলফনামা জমার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার অর্থাত এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে তলব করেছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সি, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কিন্তু, এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলায়, এদিন তিনি যাননি।
এর আগে তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও দিল্লিতে ডেকেছিল ইডি! কিন্তু, কোভিড পরিস্থিতির যুক্তি দেখিয়ে তিনিও যাননি। এরপরই দিল্লির পাতিয়ালা কোর্টে মামলা করে ইডি।
সেই মামলায়, ৩০ সেপ্টেম্বর রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাজিরা দিতে বলে পাতিয়ালা হাউস কোর্ট। এই প্রেক্ষাপটে অভিষেক-রুজিরা, দু’জনেই দিল্লি হাইকোর্টে, ইডির দিল্লি তলবের সমন খারিজের আবেদন জানান। বলেন, তাঁরা কলকাতায় ইডির সামনে হাজির হতে প্রস্তুত।
এদিন সেই মামলার শুনানিতে, তৃণমূল সাংসদের আইনজীবী কপিল সিব্বল যুক্তি দেন, ইডির দাবি অনুযায়ী, অপরাধ সংগঠিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হচ্ছে, তাঁরা কলকাতার বাসিন্দা। আপনাদের (ইডি) কলকাতায় জোনাল অফিস আছে। সেখানেই জিডজ্ঞাসাবাদ করা হোক। অন্য কোথাও নয়। তাঁরা তো তদন্তে বাধা দিচ্ছেন না। সহযোগিতা করছেন। আপনারা ১০ বছর আগেকার নথিও চাইছেন।
পাল্টা ইডির তরফে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, যেহেতু এই মামলায়, দ্বৈত-নাগরিকত্বের বিষয় আছে, তাই পুরনো নথি চেয়েছি। প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্টে, এই নথি চাওয়ার অধিকার আমাদের আছে।
অভিষেক ও রুজিরার আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, এই মামলায় অন্য মহিলাদের ক্ষেত্রে, তাঁরা যেখানকার বাসিন্দা, সেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাহলে রুজিরাকে কেন দিল্লিতে ডাকা হচ্ছে?
পাল্টা সলিসিটার জেনারেল বলেন, প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অনুযায়ী, এই ধরনের তদন্তের ক্ষেত্রে কোনও ভৌগলিক সীমারেখা নেই। যা সিআরপিসি-র ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। এই মামলায় অন্য কোনও মহিলাকে তাঁদের ঘরে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, এই দাবি সঠিক নয়।
তখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রীর আইনজীবী বলেন, আজ দিল্লি আসতে বলছেন! কাল বলবেন নাগাল্যান্ডে আসুন! পরশু বলবেন হায়দরাবাদে আসুন! তারপরে বলবে আহমেদাবাদে এসে দেখা করুন! এটা কি ধরনের তদন্ত?
পাল্টা ইডির তরফে প্রশ্ন করা হয়, দিল্লিতে রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা আছে। তাহলে দিল্লিতে ED-র অফিসে হাজিরা দিতে অসুবিধা কোথায়?
সলিসিটার জেনারেল আরও দাবি করেন, যেদিন রুজিরা জানালেন, দিল্লি আসতে পারবেন না, সেদিন উনি দিল্লিতেই ছিলেন। গিয়েছিলেন বিউটি পার্লারে। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে।
তখন অভিষেক ও রুজিরার আইনজীবী পাল্টা বলেন, যেদিন জিজ্ঞাসাবাদের কথা ছিল, সেদিন রুজিরা দিল্লিতে ছিলেন না। তাছাড়া সাংসদ হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে আসতেই হয়। এখানে তাঁর অফিস ও থাকার জায়গা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে তদন্তের কি সম্পর্ক? দু’জনেরই স্থায়ী ঠিকানা কলকাতার। কেউই দিল্লির বাসিন্দা নন।
এরপর ইডির দিল্লিতে সমনের ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চান কপিল সিব্বল। কিন্তু, বিচারপতি যোগেশ খান্না স্থগিতাদেশ দেননি। এই প্রেক্ষিতে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, আদালতের বিষয়, কিন্তু ইডি হেনস্থা করতে চাইছে, কলকাতায় যেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়, সেখানে ওরা দিল্লিতে ডেকে পাঠাচ্ছে, আদালত বিষয়টি দেখছে, এখনও তো রায় দেয়।
বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, ৩ দিনের মধ্যে দু’পক্ষকে এ বিষয়ে হলফনামা জমা দিতে হবে। সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানি।
আরও পড়ুন: কয়লাকাণ্ডে রুজিরা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে হাজিরার নির্দেশ দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্টের
আরও পড়ুন: কয়লা পাচারকাণ্ডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্ত্রী রুজিরাকে তলব ইডি-র