নয়াদিল্লি: বিনা বিচারে পাঁচ বছর ধরে জেলে। জামিন নিয়ে বার বার করে জবাব চাওয়া হলেও, আসেনি সদুত্তর। বরং জবাব দিতে বাড়তি সময় চাওয়া হয়। সেই নিয়ে দু’দিন আগেই দিল্লি পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু উমর খালিদ, শার্জিল ইমামদের জামিনের বিরোধিতা করে এবার মারাত্মক অভিযোগ তুলল দিল্লি পুলিশ। তাদের দাবি, ২০২০ সালে দিল্লি দাঙ্গার নেপথ্যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র ছিল। 'সরকার ফেলে দেওয়ার' লক্ষ্যে পরিকল্পিত ভাবেই হিংসা ঘটানো হয় রাজধানীর বুকে।

Continues below advertisement

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র উমর খালিদ-সহ শার্জিল ইমাম, মীরান হায়দর, গুলফিশা ফতিমা এবং অন্যদের জামিনের বিরোধিতায় ১৭৭ পাতার হলফনামা তৈরি করেছে দিল্লি পুলিশ। তাদের দাবি, দিল্লির বুকে এমনি এমনি দাঙ্গা বাঁধেনি। বরং পরিকল্পিত ভাবে দাঙ্গা ঘটানো হয়েছিল, যাতে ভারতের অভ্যন্তরীণ সম্প্রীতি এবং আন্তর্জাতিক অবস্থানকে নড়বড়ে করে দেওয়া যায়। সাম্প্রদায়িকতা নির্ভর গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন অভিযুক্তরা। তদন্তে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ, তথ্যমূলক ও প্রযুক্তিগত প্রমাণপত্র হাতে এসেছে, যাতে ষড়যন্ত্রে তাঁদের সংযোগ মিলেছে।

প্রথম দফায় যখন আমেরিকার মসনদে আসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেই সময় তাঁর ভারত সফরের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে দিল্লির বুকে হিংসার ঘটনা নেহাত কাকতালীয় নয় বলে দাবি দিল্লি পুলিশের। আসলে আন্তর্জাতিক মহলের নজর কাড়ার চেষ্টা হচ্ছিল, দেশের নেতিবাতক ছবি তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছিল। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন-কে আন্দোলনের বিষয়বস্তুও বাছা হয়েছিল যত্ন সহকারেই। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আড়ালে অনুঘটকের কাজ করছিল উগ্রবাদ। 

Continues below advertisement

উমর-শার্জিলদের বিরুদ্ধে ঠিক কী প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তা যদিও খোলসা হয়নি এখনও পর্যন্ত। কিন্তু নানা বাহানায় বার বার তাঁদের জামিনের মামলা পিছিয়ে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত দিল্লি পুলিশ। কিন্তু হলফনামায় দিল্লি পুলিশ দাবি করেছে, উমর, শার্জিল, মীরান, গুলফিশারাই ‘অযৌক্তিক আর্জি’ জানিয়ে, ‘সম্মিলিত অসহযোগিতা’র মাধ্যমে পরিকল্পিত ভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছেন।  নিম্ন আদালতে চার্জগঠন এবং বিচার প্রক্রিয়াতেও অভিযুক্তরা বাধা দেন বলে দাবি তাদের। তদন্তকারীদের জন্য নয়, অভিযুক্তদের জন্যই বিচারপ্রক্রিয়ায় এত দেরি হচ্ছে বলে দাবি করছে দিল্লি পুলিশ।

গত পাঁচ বছর ধরে বিনা বিচারে উমর-শার্জিল-গুলফিশাদের জেলবন্দি করে রাখার সপক্ষেও যুক্তি দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। তাদের দাবি, বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন UAPA আইন অনুযায়ী, সন্ত্রাস-সম্পর্কিত গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে ‘জামিন নয়, জেল’ নীতিই কার্যকর। দিল্লি পুলিশের দাবি, প্রাথমিক ভাবে দোষী না হওয়ার ধারণা প্রতিষ্ঠা করতেই ব্যর্থ হয়েছেন অভিযুক্তরা। অপরাধের গুরুত্ব যা, তাতে বিচার প্রক্রিয়ায় ঢিলেমির কারণ দেখিয়েই ওঁদের মুক্তি দেওয়া যায় না। অভিযুক্তরা সহযোগিতা করলে ১০০-১৫০ সাক্ষীর বয়ান-সহ বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব বলেও দাবি তাদের।

দিল্লি পুলিশের দাবি, ট্রাম্পের উদ্দেশে যে বার্তা দেওয়া হয়, তাতেই বোঝা যায়, পরিকল্পিত ভাবে ট্রাম্পের সফর চলাকালীনই দাঙ্গা বাঁধানো হয়।  আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে CAA ইস্যুকে পৃথিবীর সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া লক্ষ্য ছিল। দেখানোর চেষ্টা হচ্ছিল যে মুসলিমদের নিশানা করেই CAA আনা হয়েছে। অভিযুক্তদের ষড়যন্ত্রেই দিল্লি দাঙ্গায় ৫৩ জনের প্রাণ গিয়েছে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে এবং শুধুমাত্র দিল্লিতেই ৭৫০ এফআইআর দায়ের হয়েছে বলে দাবি দিল্লি পুলিশের। দেশের সর্বত্র অশান্তি বাঁধানো লক্ষ্য ছিল বলেও দাবি করা হয়েছে হলফনামায়।