সঞ্চয়ন মিত্র, রঞ্জিত সাউ, কলকাতা: সামনে ভোট থাকলেই কি থমকে যায় জ্বালানি তেলের (Fuel Price) দামের দৌড়? বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়তে বাড়তে যখন রেকর্ড গড়ে ফেলেছে, তখনও ভারতে অপরিবর্তিত রয়েছে পেট্রোল ডিজেলের (Petrol, Diesel Price) দর। সেই প্রেক্ষাপটে আরও জোরাল হচ্ছে এই প্রশ্ন। সঙ্গে মাথাচাড়া দিচ্ছে আশঙ্কা, ভোট (Election) মিটলেই কী আরও মহার্ঘ হবে জ্বালানি তেল?


লোকগানের ভাষা ধার করে বললে, এ বড় আজব কুদরতি। তেলের দামের ধাঁধা বুঝে ওঠা দায়। আন্তর্জাতিক বাজারে (Inter National Market) বাড়তে বাড়তে ২০১৪ সালের পর সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে ফেলেছে ব্রেন্ট ক্রুড বা অপরিশোধিত তেলের দাম। অথচ গত প্রায় আড়াই মাস ধরে ভারতে পেট্রোপণ্যের দাম এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।


করোনা আবহে পেট্রোল, ডিজেলের দামে এই স্থিতি নিঃসন্দেহে সবার কাছে স্বস্তির। কিন্তু কতদিন অটুট থাকবে এই স্বস্তি? সামনেই উত্তরপ্রদেশ সহ ৫ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। সেই ভোটপর্ব মিটলেই কি আবার দৌড়তে শুরু করবে জ্বালানি তেলের দাম?


তৃণমূল নেত্রী ও পুর-নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কথায়, আমরা চাই মানুষের জন্য বোঝা কম হোক। দাম না বাড়ুক। আশঙ্কা এটাই ৫ রাজ্যের ভোট মিটলেই আবার দাম বাড়বে। আমাদের দেশে ডায়নামিক প্রাইসিং কাজ করে না।


বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, এটা সরকার ঠিক করে না। কমিটি ঠিক করে। আর আগে দাম বেড়েছে তখন সবাই চিৎকার করছিল দাম তখন কমিয়েছে। অনেক কিছু বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। কংগ্রেস যা নিয়ম করছে তার ওপরেই চলছে। পুরনো রেকর্ডেই লুকিয়ে রয়েছে আশঙ্কার মেঘ। 


গত বছর অক্টোবরে কলকাতায় পেট্রোল-ডিজেলের দাম যখন লিটারে ১০০ টাকা পার করেছিল, তখনও বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম এত ঊর্ধ্বমুখী ছিল না। অথচ তখন ধারাবাহিক ভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার জন্য বিশ্ববাজারকেই দায়ী করে এসেছে মোদি সরকার। ৫ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে, বিশ্ববাজারে যখন অপরিশোধিত তেলের দাম চড়ছে, ভারতে তখন জ্বালানির দর স্থির। 


আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম এবং ডলারের সঙ্গে ভারতীয় মুদ্রার বিনিময় মূল্যের ওপর নির্ভর করে তেলের দাম নির্ধারণ করে ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, যা ডায়নামিক প্রাইসিং সিস্টেম নামে পরিচিত। 


আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের চাহিদা বাড়লে, ভারতে ঊর্ধ্বমুখী হয় জ্বালানির দাম। এটাই চেনা ছবি। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ভোট থাকলেই বদলে যায় ছবিটা। 


২০১৭ সালে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের আগে দু সপ্তাহ পেট্রোল ডিজেলের দামে হেরফের হয়নি। ওই বছরও ৫ রাজ্যে বিধানসভা ভোট ছিল। তখম সাময়িক স্বস্তি মিলেছিল তেলের দামে। 


২০১৮ সালে কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনের আগে ১৯ দিন তেলের দাম স্থির ছিল। অথচ ওই সময়ে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলে প্রায় ৫ ডলার বেড়েছিল। কর্নাটক ভোট মিটতেই টানা ১৬ দিন বেড়েছিল জ্বালানি তেলের দাম! 


অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের কথায়, ভারতে তো ডায়নামিক প্রাইসিং দেখা যায়নি। এটা মানুষকেই বুঝতে হবে কেন দাম বাড়ছে না। ভোট মিটলেই আবার দাম বাড়ার আশঙ্কা। যাঁরা ভোট দিতে যাবেন তাঁদেরকেও চিন্তা করতে হবে এই দাম না বাড়া কীসের জন্য। ভোট রাজনীতির ঘূর্ণিতেই কী তাহলে পাক খাচ্ছে ডায়নামিক প্রাইসিং সিস্টেম?