পানাজি: প্রয়াত মনোহর পর্রীকরের (Manohar Parrikar) ছেলে উৎপল পর্রীকরকে (Utpal Parrikar) ঘিরে গোয়া (Goa Polls 2022) বিজেপি-তে (BJP) পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হয়ে উঠছে। প্রকাশ্যে আবেদন একাধিক বার আবেদন জানানো সত্ত্বেও বাবার আসনে তাঁকে প্রার্থী করেনি বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে যখন জল্পনা চলছে, ঠিক সেই সময় নির্দল প্রার্থী হিসেবে উৎপলকে পানাজি থেকে সমর্থন করবেন বলে জানালেন গোয়ায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘ (RSS)-এর প্রাক্তন প্রধান সুভাষ বেলিঙ্কর (Subhash Velingkar)। 


উল্লেখ্য, ২০১২ সালে গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্ত্রক পার্টির সঙ্গে জোট গড়ে জয়ী হয় বিজেপি। কিন্তু সেখানে সুভাষের পরামর্শ এবং সুপারিশ কার্যকর হচ্ছিল নাা। তাতে প্রকাশ্যেই তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। তার জেরে সঙ্ঘ এবং গোয়ায় সঙ্ঘ প্রধানের পদ, দু’টিই হারাতে হয় সুভাষকে। তার পর গোয়া সুরক্ষা মঞ্চ নামের নিজের দল গঠন করেন তিনি। পানাজি আসনে উৎপলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বিজেপি-র অস্বস্তি বাড়ালেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।


এর আগে, বিজেপি-র প্রাক্তন শরিক দল শিবসেনাও উৎপলকে সমর্থন করার কথা জানিয়েছিল। দলের নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘‘গোয়া নির্বাচনে লড়বেন কি না, তা উৎপল পর্রীকরের উপরই নির্ভর করছে। বিজেপি-কে গোয়ায় প্রতিষ্ঠিত করার পিছনে ওঁর পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। নির্দল প্রার্থী হিসেবে উৎপল ভোটে দাঁড়ালে, আমরা ওঁকে সমর্থন করব।’’


পানাজি ছাড়া অন্য় কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন উৎপল।  কিন্তু বিজেপি তাতে সম্মত না হওয়ায়, অন্য চিন্তা-ভাবনাও শুরু করেছেন তিনি। তবে এখনও পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্ত জানাননি। এ নিয়ে শুক্রবার সংবাদ সংস্থা এএনআই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে উৎপল জানান, শুক্রবারই সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের সিদ্ধান্ত জানাবেন তিনি। 


তবে শুধু উৎপলই নন, গোয়ায় বিজেপি-র অস্বস্তি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। টিকিট না পেয়ে দলের ইতিমধ্যেই একাধিক নেতা নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাবিত্রী কাভলেকর, গোয়ার উপমুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রকান্ত কাভলেকরের স্ত্রী তিনি। গোয়ায় বিজেপি-র মহিলা মোর্চার সহ-সভাপতি ছিলেন সাবিত্রী। ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়াও, পূর্ত দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী দীপক পুষ্কর এবং ডেপুটি স্পিকার ইসিডোর ফার্নান্ডেজও বিজেপি থেকে ইস্তফা দিয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত পারসেকরও বিজেপি ছেড়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে নাম তুলেছেন। 


আরও পড়ুন: Congress Youth Manifesto, UP: ১ শতাংশ সুদে ঋণ, ২০ লক্ষ কর্মসংস্থান, যুবসমাজকে প্রতিশ্রুতি কংগ্রেসের


যদিও এর মধ্যে উৎপলের সঙ্গে বিজেপি-র বর্তমান সমীকরণ নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। কারণ গোয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় থাকাকালীন বরাবর পানাজি পছন্দের আসন ছিল তাঁর বাবা, তথা গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত পর্রীকরের। দু’বছর আগে এই পানাজিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।  বাবার আসনেই যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, ইতিমধ্যে একাধিক বার প্রকাশ্যে তা জানিয়েছেন উৎপল। কিন্তু গোয়ার যে প্রার্থী তালিকা এখনও পর্যন্ত সামনে এনেছে বিজেপি, তাতে পানাজি থেকে প্রার্থী করা হয়েছে কংগ্রেস ছেড়ে আসা আন্তাসিও ‘বাবুশ’ মঁসেরাতেকে। 


তিন-তিন বার গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন পর্রীকর। গোয়ায় বিজেপি-র স্তম্ভ বলা হতো তাঁকে। দীর্ঘ ২৫ বছর পানাজি আসনটি তাঁর দখলে ছিল। এমনকি ২০১৭ সালে বিধায়ক ভাঙিয়ে যখন গোয়ায় সরকার গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি, তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ ছেড়ে শক্ত হাতে গোয়ায় বিজেপি-র হাল ধরেন পর্রীকর।  ২০১৯ সালে পর্রীকরের মৃত্য়ুর পর উপ নির্বাচনে ওই আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন মঁসারেতে। পরে বিজেপি-তে চলে যান তিনি। তাই কোনও ভাবে তাঁকে চটাতে চাইছে না গেরুয়া শিবির। 


কিন্তু একে পর্রীকেরর ছেলে, তার উপর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক উৎপল যুব নেতাদের মধ্যে জনপ্রিয়। তিনি নিজে তো বটেই, তাঁর সমর্থকরাও পানাজি আসনটি দাবি করে আসছেন।এ  নিয়ে দফায় দফায় দলের নেতাদের কাছে সুপারিশও করতে দেখা গিয়েছে উৎপল এবং তাঁর সমর্থকদের।  কিন্তু গোয়ায় বিজেপি-র নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দেবেন্দ্র ফড়নবীসের সাফ বক্তব্য, ‘‘গোয়ায় বিজেপি-কে প্রতিষ্ঠা করতে অনেক পরিশ্রম করেছেন মনোহর পর্রীকর, কিন্তু মনোহর পর্রীকর বা কোনও বড় নেতার ছেলে হলেই তাঁকে নির্দিষ্ট আসনটি দিয়ে দিতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই বিজেপি-র। কাজ করলে তবেই ফল মিলবে।’’


যদিও ফড়নবীসের দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিজেপি-র অন্দরেই। কারণ মঁসারেতেকে পানাজির টিকিট দেওয়ার পাশাপাশি, তাঁর স্ত্রী জেনিফারকে তালেইগাও থেকে এবং গোয়ার মন্ত্রী বিশ্বজিৎ রানের স্ত্রী দিব্যাকে তাঁরই শ্বশুরমশাইয়ের বিরুদ্ধে পোরিনের টিকিট দিয়েছে বিজেপি। সে ক্ষেত্রে পরিবারতন্ত্রের কথা মাথায় এল না কেন প্রশ্ন তুলছেন উৎপলের সমর্থকরা। তাতে দলের অন্দরেই অস্বস্তি বাড়ছে বিজেপি-র।