নয়াদিল্লি: জ্ঞানবাপী মসজিদ মামলায় হিন্দু পক্ষের পিটিশন নিয়ে শুনানির আবেদনে সম্মতি দিল বারাণসী আদালত। মসজিদ চত্বরে শ্রীঙ্গার গৌরির পুজো দেওয়ার আবেদন জানিয়ে মামলা করেছিলেন পাঁচ হিন্দু মহিলা। সেই মামলায় শুনানি হবে বলে জানিয়েছে আদালত। আবেদনকারী সোহন লাল আচার্য জানিয়েছেন, মুসলিম পক্ষের আবেদনকারীরা এলাহাবাদ হাইকোর্টে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাঁরাও এই মামলা লড়বেন বলেই জানিয়েছেন।


দীর্ঘদিন ধরে চলছে জ্ঞানব্যাপী মসজিদ মামলা। এই বিবাদ কয়েক দশকের পুরনো। একবার দেখে নেওয়া যাক এর ইতিহাস।


১৯৯৮: আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি তরফে এলাহাবাদ হাইকোর্টে যাওয়া হয়েছিল। তাদের আবেদন ছিল, আইন অনুযায়ী মন্দির-মসজিদ সংক্রান্ত এই বিবাদ কোনও সিভিল কোর্ট বা দেওয়ানি আদালত বিচার করতে পারে না। সেই মামলায় হাইকোর্ট এই বিচারপ্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। যা ২২ বছর ধরে চলেছে।


২০১৯: ফের উঠে আসে এই মামলা। স্বয়ম্ভু জ্যোতির্লিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশ্বরের তরফে বারাণসী আদালতে একটি মামলা হয়। সেখানে যিনি আবেদনকারী, তিনি মসজিদ চত্বরে ASI-কে দিয়ে একটি সমীক্ষা করার দাবি জানান।


২০২০: ASI-কে দিয়ে জ্ঞানব্যাপী মসজিদ চত্বরে সমীক্ষা করানোর আবেদনের বিরোধিতা করে আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির তরফে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়।


২০২০: আবেদনকারী ফের নিম্ন আদালতের শরণাপন্ন হন। ১৯৯১ সালের ওই মামলার শুনানি শুরু করার দাবি জানান।


আগস্ট ২০২১: পাঁচজন হিন্দু মহিলা বারাণসী আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেন। জ্ঞানব্যাপী মসজিদ চত্বরে হনুমান, নন্দী এবং শ্রীঙ্গার গৌরিকে পুজো দেওয়ার আবেদন জানানো হয়।


সেপ্টেম্বর, ২০২১: এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানায় যে এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই চলা মামলাগুলিতে আদালতের আরও রায়ের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।   


এপ্রিল, ২০২২: ২০২১ সালের আগস্টে করা মামলার ভিত্তিতে বারাণসী আদালত একজন কোর্ট কমিশনারকে নিয়োগ করে, মসজিদ চত্বরে সমীক্ষা করার নির্দেশও দেয়। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে যায় আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি। পাশাপাশি মসজিদ কমিটির তরফে সুপ্রিম কোর্টে একটি স্পেশাল লিভ পিটিশন দাখিল করা হয়। 


৬ মে, ২০২২: জ্ঞানব্যাপী মসজিদ চত্বরে ভিডিওগ্রাফি সমীক্ষা শুরু হয়। 


১২ মে, ২০২২: আদালতের তরফে বরিষ্ঠ আইনজীবী বিশাল সিংহকে সমীক্ষা দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাকে স্পেশাল কোর্ট কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। ১৭ মে-এর মধ্যে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়।


১৪-১৯ মে, ২০২২: ফের শুরু হয় সমীক্ষা। ২দিন ধরে চলে। সমীক্ষার সব রিপোর্ট আদালতের কাছে জমা দেওয়া হয়।


২০ মে, ২০২২: সুপ্রিম কোর্টের তরফে গোটা বিচারপ্রক্রিয়া জেলা আদালতের বিচারকের কাছে পাঠানো হয়। 


২৬ মে, ২০২২:  আবেদন গ্রাহ্য কিনা তা নিয়ে শুনানি শুরু হয় জেলা আদালতে। 


২১ জুন, ২০২২: বারাণসীর বিচারক রবি কুমার দিবাকর, যিনি জ্ঞানব্যাপী মসজিদ চত্বরে ভিডিওগ্রাফির নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর বদলি হয়ে যায়। 


১১ জুলাই, ২০২২: জ্ঞানব্যাপী মামলায় যাঁরা হিন্দু আবেদনকারী, তাঁরা নতুন একটি ট্রাস্ট তৈরি করেন। নাম শ্রী আদিমহাদেহ কাশী ধর্মালয় মুক্তি ন্যাস (Shri AdiMahadev Kashi Dharmalaya Mukti Nyas)


১৮ জুলাই, ২০২২: জ্ঞানব্য়াপী মসজিদ চত্বরে 'পূজা', 'দর্শন', ASI-কে দিয়ে গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার সার্ভে (ground penetrating radar survey) এবং কার্বন ডেটিং পরীক্ষার একটি আবেদন তালিকাভুক্ত করতে সম্মতি জানায় সুপ্রিম কোর্ট। আদালত-নির্দেশিত সমীক্ষার পর দাবি করা হয়েছিল মসজিদ চত্বরে একটি শিবলিঙ্গের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, যেটির কার্বন ডেটিং পরীক্ষা করার আবেদন করা হয়েছিল।


২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২: বারাণসী আদালত ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের রায়দান মুলতুবি রেখেছিল। ওই সময়ের মধ্যে দুই পক্ষকে সওয়াল-জবাব শেষ করার সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল।  


আরও পড়ুন: রাস্তায় দীর্ঘ যানজট, রোগীর প্রাণ বাঁচাতে ৩কিমি দৌড়ে হাসপাতাল পৌঁছলেন চিকিৎসক