দীপক ঘোষ, কলকাতা: সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন (president election)। সংবিধান (constitution) অনুযায়ী, এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বিধায়ক (mla) ও সাংসদরা (mp)। তবে রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদদের কোনও ভোটাধিকার থাকে না।
কী ভাবে হয় ভোট?
ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সরাসরি জনগণ অংশ নিতে পারেন না। ভোট দেন বিধায়ক ও সাংসদরা। প্রত্যেকের ভোটের মূল্য রয়েছে। সেই মূল্য গাণিতিক পদ্ধতিতে বের করতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে প্রত্যেকটি রাজ্যের বিধায়কদের ভোটমূল্য নির্ধারণ করা হয়। তার পর পুরো দেশের মোট মূল্য সাংসদ সংখ্যা নিয়ে ভাগ করে প্রত্যেক সাংসদের ভোট মূল্য কষা হয়। এই জন্য ১৯৭১ সালের জনগণনা রিপোর্টকে মানদণ্ড হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। সহজ করে ১৯৭১ সালে প্রত্যেক রাজ্যে যে জনসংখ্যা ছিল, তা-ই হবে ভোট মূল্য নির্ধারণের ভিত্তিভূমি। উদাহরণ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের কথা ধরা যাক। ১৯৭১ সালে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ছিল প্রায় চার কোটি চুয়াল্লিশ লক্ষ। সেই সংখ্যাকে প্রথমে এক হাজার দিয়ে ভাগ করতে হবে। তারপর সেই সংখ্যাকে ২৯৪ অর্থাৎ এ রাজ্যের বিধায়কসংখ্যা দিয়ে ভাগ করতে হবে। ফলাফল দাঁড়াবে ১৫১ এবং এটাই হবে পশ্চিমবঙ্গের একজন বিধায়কের ভোট মূল্য। এভাবেই গোটা দেশের সমস্ত রাজ্যের বিধায়কদের ভোট মূল্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন জাগতে পারে, ১৯৭১ সালের জনসংখ্যার হিসেবকেই কেন মানদণ্ড হিসেবে ধরে রাখা হয়েছে? কারণটা চমকপ্রদ।
ফিরে দেখা ইতিহাস...
সালটা ১৯৭৬। প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে ইন্দিরা গান্ধী। দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা চলছে। সেই সময় সংবিধানে ব্যাপক আকারে সংশোধনী পাশ করিয়েছিল ইন্দিরা-সরকার। সে বারই প্রথম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপরও জোর দেওয়া হয়। কর্মসূচি সফল করতে কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়ে সরকার। রাজ্যগুলিকে কর্মসূচি সফল করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কোন রাজ্য সফল আর কোন রাজ্য ব্যর্থ হল, তার উপর ভিত্তি করে অনেক কিছুই নির্ধারিত হতে পারত। যে রাজ্যগুলি সফল হবে, জনসংখ্যার বিচারে ব্যর্থ রাজ্যগুলি তাদের ছাপিয়ে যাবে। ফলে সফল রাজ্যগুলির বিধায়ক এবং সাংসদসংখ্যা আনুপাতিকহারে ব্যর্থ রাজ্যগুলির তুলনায় কমে যেতে থাকবে। সে কারণেই কোনও রাজ্য এই কর্মসূচি সফল করতে তেমন উৎসাহ নাও দেখাতে পারে, একথা ভেবে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছিল, ২০০০ সাল পর্যন্ত বিধায়ক এবং সাংসদ সংখ্যার কোনও পরিবর্তন হবে না। ১৯৭১ সালের জনসংখ্যা অনুযায়ী যা হয়েছে, ২৫ বছর সেটাই বহাল থাকবে। রাষ্ট্রপতি ভোটেও '৭১ এর জনসংখ্যাই ভোট মূল্য নির্ধারণের ভিত্তিভূমি হবে। ২০০১ সালের জনগণনা রিপোর্ট সামনে এলে তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী সিধান্ত নেবে ভবিষ্যৎ সরকার। সংবিধানে সংশোধনীও আসে এই মর্মে।
কাট টু ২০০১। গদিতে বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। জনগণনা রিপোর্ট প্রকাশ হবার এক বছর আগেই অর্থাৎ ২০০০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করে। দেখা যায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সব রাজ্যের সাফল্য সমান নয়। কেরল-সহ দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির থেকে অনেকটাই এগিয়ে। সুতরাং চলতি ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হলে তা সঠিক হবে না। পরিবর্তন আনার আগে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাজ্যগুলির মধ্যে ভারসাম্য আসার পরই সাংসদ-বিধায়ক সংখ্যার পরিবর্তন করা যেতে পারে। নতুন সংশোধনী এনে আগের নিয়মকে পরবর্তী ২৫ বছরের জন্য বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হলো। এর ফলে আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত আইন অপরিবর্তিত থাকবে। এই আইনের জন্যই এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও ১৯৭১ সালের জনসংখ্যাকে ভিত্তিভূমি ধরে ভোট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাজপেয়ী সরকার সেই বছরই আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। সংবিধান সংশোধনী এনে বলা হয়, ২০০১ সালের জনগণনা রিপোর্টের ভিত্তিতে আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রেখে বিধানসভা ও লোকসভা এলাকা পুনর্বিন্যাস করা যাবে। বিগত দিন গুলিতে জনবিন্যাসের আমূল পরিবর্তন হওয়ায় এই ডিলিমিটেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০৩১ সাল পর্যন্ত দশ বছর অন্তর অন্তর জনগণনা রিপোর্ট মোতাবেক ডিলিমিটেশন চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এখনও ভোটমূল্যের মূল মানদণ্ড '৭১-র জনগণনা।
আরও পড়ুন:ভিড় বাড়ছে পোস্ট কোভিড ক্লিনিকে, সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের