কলকাতা: ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতাবৃদ্ধির লক্ষ্যপূরণে গত সপ্তাহেই ভারতীয় বায়ুসেনার (Indian Air Force) হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-সম্পন্ন মাঝারি-পাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র (MRSAM) সিস্টেম।
সর্বাধিক ৭০ কিলোমিটার পাল্লা বিশিষ্ট বারাক-৮ (Barak-8) ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে গঠিত এই অত্যাধুনিক সিস্টেম যৌথভাবে তৈরি করেছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও (DRDO) এবং ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (Israel Aerospace Industries)।
এটিই ভারতীয় বায়ুসেনার (IAF) হাতে আসা এমন প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সিস্টেম (Ballistic Missile Defence)। জয়সলমেরে হওয়া একটি অনুষ্ঠানে এই ফায়ারিং ইউনিট হস্তান্তর করা হয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আরকে ভাদৌরিয়ার (ACM RK Bhadauria) উপস্থিতিতে। উপস্থিত ছিলেন ডিআরডিও ও ইজরায়েলি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
এই ক্ষেপাস্ত্রের অন্য একটি সংস্করণ দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহার করেছে ভারতীয় নৌসেনা। বর্তমানে এই মিসাইল সিস্টেম ভারতের বহু যুদ্ধজাহাজে অন্তর্ভুক্ত ও মোতায়েন করা হয়েছে। নৌসেনা ব্যবহৃত সংস্করণটি হল দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র (LRSAM)।
পাশাপাশি, ভারতীয় স্থলবাহিনীও এই বারাক-৮ মাঝারি পাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্রের বরাত দিয়ে রেখেছে। সূত্রের খবর, আগামী বছরই তা ভারতীয় সেনার হাতে এসে পৌঁছবে।
Barak 8 MRSAM-কে বিশ্বের অন্যতম সেরা অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র উল্লেখ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশের আকাশসীমা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এই অস্ত্রটি 'গেম-চেঞ্জার' হিসেবে প্রমাণিত হবে।
Barak-8 MRSAM-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য (Key details and specification of MRSAM system)
এই ক্ষেপণাস্ত্র আসার ফলে, ভারতের প্রতিরক্ষায় কী কী উন্নতি হবে, এটা জানার আগে, দেখে নেওয়া যাক এই বারাক-৮ MRSAM-এর বৈশিষ্ট্যগুলি---
এটি একটি মাঝারি পাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম। ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পাল্লার পরিসরে যে কোনও শত্রু বিমান, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে।
এটি একটি উন্নত সিস্টেম যা দেশের আকাশপথে প্রবেশ করা শত্রুপক্ষের যে কোনও বস্তুকে নির্ভুলভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম।
এই ক্ষেপণাস্ত্রে রয়েছে সর্বাধুনিক অ্যারে রেডার, উন্নত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি সিকার বিশিষ্ট ইন্টারসেপ্টর, কমান্ড এবং কন্ট্রোল এবং ভ্রাম্যমান লঞ্চার থেকে নিক্ষেপের সুবিধা।
ডিআরডিও এবং ইজরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ যৌথভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তৈরি করেছে। এর পাশাপাশি, এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে -- ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (BEL), লারসেন অ্যান্ড টুব্রো (L&T) এবং ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড(BDL) এবং ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা সংস্থা রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেম।
কীভাবে MRSAM সিস্টেম ভারতের আকাশসীমা প্রতিরক্ষা বৃদ্ধি করবে? (How MRSAM system will boost India’s Air Defence?)
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, MRSAM হল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম। এই সিস্টেম পরীক্ষিত এবং একাধিক দেশে ব্যবহৃত। এই প্রকল্প ভারত ও ইজরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের উদাহরণ। তাঁর মতে, এটি ভারত এবং ইজরায়েল -- উভয় দেশের প্রতিরক্ষা ঘাঁটিগুলিকে শক্তিশালী করবে।
প্রসঙ্গত, সামরিক বাহিনীর তিন শাখার জন্য অত্যাধুনিক ভূমি থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম গবেষণা ও উৎপাদন করতে ভারত ও ইজরায়েল গত চার বছরে প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ভিন্ন ভিন্ন চুক্তি করেছে।
কেন বর্তমান পরিস্থিতিতে MRSAM সিস্টেম প্রয়োজন? (Why MRSAM system is required?)
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে প্রভাবিত হয়েছে অর্থনীতি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রগুলি। এমতাবস্থায়, ভারতের নিরাপত্তা এবং স্বনির্ভরতাকে শক্তিশালী করা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে, এটা কোনও কৃতিত্ব নয়।
তাঁদের মতে, বিশ্বের প্রেক্ষাপট খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং পারস্পরিক স্বার্থ অনুযায়ী পাল্টে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশগুলির মধ্যে সমীকরণও। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল হোক বা দক্ষিণ চীন সাগর, মধ্য এশিয়া হোক বা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, সর্বত্রই অনিশ্চয়তা বিরাজমান। যে কারণে, বর্তমানে দেশের স্থলসীমান্ত থেকে শুরু করে জলসীমা ও আকাশসীমা-- সর্বত্রই নিরাপত্তা জোরদার করা বাধ্যতামূলক।