নয়াদিল্লি: রাশিয়ার উপর (Western Sanctions on Russia) নিষেধাজ্ঞার বোঝা চাপিয়ে গেলেও, ভারত, চিন-সহ এশীয় এবং উপসাগরীয় দেশগুলি চিন্তায় রেখেছে পশ্চিমি দেশগুলিকে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারত-রাশিয়া (India Russia Oil Deal) তৈল চুক্তি তাদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলল। কারণ চলতি সপ্তাহের শুরুতেই একটি রুশ তৈল সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (Indian Oil Corporation), যার আওতায় রাশিয়ার থেকে ৩০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কেনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে (Crude Oil)। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের তুলনায় ভারতকে এই চুক্তিতে রাশিয়া মোটা অঙ্কের ছাড় (Russia Offers Discount to India) দিয়েছে বলেও খবর।


গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের (Russia Ukraine War) নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin)। তার পর থেকে এক মাস গড়াতে চললেও, যুদ্ধের গতি স্তিমিত হওয়ার লক্ষণ নেই। বরং আমেরিকা-সহ ইউরোপীয় দেশগুলির নিষেধাজ্ঞার ফাঁস যত চেপে বসছে গলায়, ততই যুদ্ধ নিয়ে অনড় অবস্থান তুলে ধরছে মস্কো। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলে কোণঠাসা হয়ে পড়া রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের এই চুক্তি যথেষ্ট অর্থবহ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। যদিও এতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় যেতে নারাজ বিশেষজ্ঞ মহল। বরং এই চুক্তিকে দুই সংস্থার ব্যবসায়িক স্বার্থের বিচারেই দেখার পক্ষপাতী তাঁরা (India Russia Relations)।


রাশিয়ার থেকে তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সুরা, হিরে-সহ একাধিক পণ্যের আমদানি ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ করেছে আমেরিকা। রাশিয়াকে পুরোপুরি বয়কট করা অসম্ভব জেনেও ইউরোপীয় দেশগুলিকে সেই পথে হাঁটকে আহ্বান জানিয়েছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু ভারতের তরফে তেমন কোনও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। তাই এই চুক্তি ঘিরে ভূ-রাজনৈতিক তরজা কাম্য নয় বলে মনে করছে দিল্লি।তাদের সাফ যুক্তি, আমেরিকার মতো দেশগুলিকে তেলের জন্য অন্য কারও উপর নির্ভর করতে হয় না। তাই তাদের পক্ষে নিষেধাজ্ঞা বসানো সহজ হলেও, অন্যদের পক্ষে তা মেনে চলা দুষ্কর।


আরও পড়ুন: Russia-Ukraine War Live : 'কয়েক প্রজন্মের মধ্যে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না রাশিয়া', হুমকি জেলেনস্কির


মোটা ছাড়ে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সেরে ভারত কোনও নিয়ম লঙ্ঘন না করলেও, পারতপক্ষে ভারত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ আগ্রাসনকে সমর্থন করছে বলে মনে করছে আমেরিকা। কারণ চুক্তিতে সিলমোহর পড়ার আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন সাকিকে। তাঁর জবাব ছিল, ‘‘এতে (ভারত-রাশিয়া তৈল চুক্তি) নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন হবে না হয়ত। কিন্তু ইতিহাস লিখনের মুহূর্তে প্রত্যেকের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। রুশ নেতৃত্বকে সমর্থন জানানো অর্থ যুদ্ধকে সমর্থন জানানো যা প্রভাব কি না মারাত্মক আকার ধারণ করছে।’’


ভারত এবং চিনের মতো দেশের রাশিয়াকে নিয়ে কী অবস্থান, তা নিয়ে শুরু থেকই উদ্বিগ্ন আমেরিকা। নিষেধাজ্ঞার ফাঁক গলে রাশিয়াকে সুবিধা করে দেওয়ার চেষ্টা করলে ফল ভাল হবে না বলে হুঁশিয়ারিও এসেছিল তাদের তরফে। সেই পরিস্থিতিতে এক দিন আগেই চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বাইডেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকা, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের মতো দেশের অবস্থানকে সমর্থন করার আর্জি জানান। কিন্তু চিনপিং সাফ জানিয়ে দেন, সামরিক শত্রুতায় না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা হওয়াই শ্রেয়। আমেরিকা এবং চিনের মতো দেশকে এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হতে হবে বলেও জানান তিনি।


তার পরেই দিল্লির তরফে রুশ সংস্থার সঙ্গে চুক্তিতে সিলমোহর পড়ার খবরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। কারণ পরিবহণ বাবদ বিপুল খরচের জন্য এত দিন রাশিয়ার উপর তেলের জন্য বিশেষ নির্ভরশীল ছিল না ভারত। কিন্তু এই মুহূর্তে রাশিয়া যে মোটা অঙ্কের ছাড় দিচ্ছে, তাতে ইন্ডিয়ান অয়েলের দেখাদেখি অন্য ভারতীয় সংস্থাগুলিও রাশিয়ার থেকে তেল কেনার দিকে ঝুঁকবে বলে মনে করা হচ্ছে। সোমবার সে ব্যাপারে ইঙ্গিতও দেন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরি। বলেন, “সরকার সব দিক বুঝেই এগোচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে কথা চলছে। রুশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমার নিজের কথা হয়েছে। আলোচনা চলছে। রাশিয়া এবং নতুন সরবরাহকারীদের কাছে কত তেল রয়েছে, রাশিয়া এবং আমাদের সংস্থাগুলির মধ্যে আলোচনা পাকা হয়ে গেলেই জানানো হবে।” তার পরই দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে বলে খবর।