পুরী: করোনা আবহের মধ্যেই আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে পবিত্র রথযাত্রা। গত বছরের মতো এবারও ভক্তশূন্য থাকছে পুরীর রথযাত্রা। প্রশাসনের তরফে জারি করা হয়েছে বেশ কিছু বিধিনিষেধ।  


এবার পুরীর রথযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন ৩ হাজার সেবায়েত ও ১ হাজার কর্মী। রথযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রত্যেকের আরটি-পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট ও ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক। 


পুরী জগন্নাথ মন্দিরের প্রশাসক অজয় জেনা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশানুসারে এবং ওড়িশা সরকারের জারি করা নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, গত বছরের মতো এবছরও ভক্তহীন থাকছে পুরীর রথযাত্রা। এবছর কোনও ভক্ত রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। 


তিনি যোগ করেন, যে সকল সেবায়েতের ভ্যাকসিনের জোড়া ডোজ নেওয়া হয়ে গেছে এবং যাঁদের আরটি-পিসিআর টেস্ট নেগেটিভ আসবে, তাঁরাই একমাত্র রথের রশি টানতে পারবেন। 


রথযাত্রা উপলক্ষে থাকছে নিরাপত্তার কড়াকড়ি। প্রায় এক হাজার কর্মী নিরাপত্তার জন্য় মোতায়েন থাকবে। এছাড়া প্রচুর সংখ্যায় পুলিশও মোতায়েন থাকবে। রবিবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত পুরীতে জারি কার্ফু।


ওড়িশা সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই সব হোটেল, লজ, গেস্ট হাউজ খালি করে দিতে বলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোনো যাবে না বলে জানিয়েছেন কালেক্টর সামর্থ বর্মা। তিনি জানিয়েছেন, জরুরি প্রয়োজন হলে সাধারণ মানুষ কোনও সমস্যার সম্মুখীন হবেন না। পুলিশ কর্মীদের সহযোগিতার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


রথযাত্রা উপলক্ষ্যে প্রতি বছরই সমুদ্র-শহর পুরী হয়ে ওঠে জনসমুদ্র। বিশেষ ধরনের কাঠ দিয়ে তৈরি তিনটি রথ-জগন্নাথদেবের নন্দীঘোষ, বলভদ্রের তালধ্বজ এবং সুভদ্রার রথ দর্পদলন৷ 


রথযাত্রার দিন অনুষ্ঠানের সূচনা হয় পহণ্ডি দিয়ে৷ মন্দির থেকে শোভাযাত্রা করে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রাকে রথে নিয়ে আসাকে স্থানীয় ভাষায় পহণ্ডি বলে৷ 


পহণ্ডির পর তিন বিগ্রহকে রথে তোলা হয়। প্রতিবারের মতো এবারও পুরীর রাজা সোনার ঝাঁটা দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করবেন৷ এই রীতিকে বলা হয় ছেড়াপহরা৷ 


পদ্মপুরাণ ও ভগবত পুরাণ অনুসারে পুরীর মন্দির তৈরির পর দেবী বিমলা মন্দির দখল করে রেখেছিলেন। জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা মন্দিরের দ্বারে এসে তাঁর কাছে মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন।


শাস্ত্রে প্রস্তরময়, ধাতুময়, মৃন্ময় এবং দারুময় মূর্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। নারায়ণ একমাত্র পুরীধামে দারুব্রহ্মরূপে প্রকাশিত।


সমস্ত ভক্তকুলকে কৃপা করার জন্য প্রভু জগন্নাথদেব মন্দির ছেড়ে বছরে একবার পথে নেমে আসেন। এই রথ হল সচল, গতিময় জীবনের প্রতীক। সেই সুউচ্চ রথে প্রভু স্বয়ং খর্বাকৃতি। তিনি বামনরূপ ধারণ করে বিরাজিত হন, যাতে সহজেই মানুষ তাঁকে টেনে নিয়ে যেতে পারেন।


পুরীধামে যুগ যুগ ধরে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার রথযাত্রা চলে আসছে। বিভিন্ন মানুষের লেখায় তার নানা বর্ণনা পাওয়া যায়।
আবার রথ থমকে যাওয়া নিয়েও রয়েছে নানান জনশ্রুতি।


শ্রীক্ষেত্র পুরীতে মহাপ্রভুশ্রী চৈতন্যদেবের অবস্থান এবং রথ-এর সামনে তাঁর প্রেমোন্মত্ত উদ্দাম নৃত্যের বর্ণনা তো অনেকের লেখায় পাওয়া যায়।


এভাবেই যুগে যুগে পুরীর রথযাত্রাকে নিয়ে গড়ে উঠেছে নানান প্রবাদ ও জনশ্রুতি।