মুম্বই: ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাণিজ্যনগরী মুম্বই সহ গোটা মহারাষ্ট্রে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছিল করোনা সংক্রমণ। ফলস্বরূপ, ফের নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটল উদ্ধব ঠাকরে প্রশাসন। 


কোভিড সংক্রমণে দেশে শীর্ষে থাকা মহারাষ্ট্রে ফের চালু হচ্ছে নাইট কার্ফু। একইসঙ্গে সপ্তাহান্তে লকডাউনের ঘোষণাও করা হয়েছে। নতুন নিয়ম কার্যকর হচ্ছে আগামীকাল, সোমবার থেকেই। 


নতুন নিয়ম অনুযায়ী, রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে নাইট কার্ফু চলবে। সঙ্গে উইকেন্ডে লকডাউন। শুক্রবার রাত ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৭টা পর্যন্ত। উইকেন্ড লকডাউনে বন্ধ থাকবে মল, রেস্তোরাঁ, বার। ৪ জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ। 


তবে, এই লকডাউনের আওতা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে জরুরি পরিষেবা ও পরিবহণকে। মন্ত্রী নবাব মালিক বলেন, ঝড়ের গতিতে করোনার বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে রবিবার থেকে নাইট কার্ফু ঘোষণা করেছে মহারাষ্ট্র সরকার।  


বলিউডে এদিনও কোভিডের হানা অব্যাহত। নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অক্ষয় কুমার। খিলাড়ি নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন একথা।  নিভৃতাবাসে চলে গিয়েছেন অভিনেতা। সেইসঙ্গে বিগত কয়েকদিনে যাঁরা তাঁর সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাঁদের করোনা পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।


করোনা আক্রান্ত আরেক অভিনেতা গোবিন্দা। রবিবার সকালে বলিউডের ছোটে মিঞাঁর কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সংবাদ মাধ্যমকে গোবিন্দা জানিয়েছেন, তাঁর মৃদু উপসর্গ রয়েছে। কোভিড বিধি মেনে তিনিও এখন নিভৃতাবাসে।


দ্বিতীয় ওয়েভে আরও দেশে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে করোনা। পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের উত্তেজনার মধ্যেই ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে দেশের করোনা পরিস্থিতি। 


রবিবার দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে গত ২৪ ঘণ্টায়  আমেরিকা ও ব্রাজিলকে টপকে গিয়েছে ভারত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩ হাজার ২৪৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫০৯।  


মহামারির এই কালো মেঘ দেখে উদ্বেগ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকসূত্রে খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংক্রমণের প্রায় ৮২ শতাংশই ৮টি রাজ্যে--মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, ছত্তিশগড়, দিল্লি, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব ও মধ্যপ্রদেশ।


জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় রবিবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিরা ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তা হল -- বেশি করে পরীক্ষা, চিহ্নিতকরণ, চিকিৎসা, কোভিড-উপযুক্ত ব্যবহার এবং টিকাকরণ। 


কেন্দ্রের তরফে রাজ্যগুলিকে বলা হয়েছে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সবাই যেন আরও সচেতন হয়। বিশেষ করে মাস্কের ব্যবহার, দূরত্ব বিধি মেনে চলা, পরিচ্ছন্নতা, এই বিষয়গুলিতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে কেন্দ্র। সেই সঙ্গে জোর দেওয়া হচ্ছে টিকাকারণে। দেশে তৃতীয় দফার কোভিড ভ্যাক্সিনেশন চলছে পুরোদমে। 


সংক্রমণ শৃঙ্খল ভাঙতে ৪৫ বছরের বেশি বয়সি নাগরিকদের কাছে আরও বেশি করে প্রতিষেধকের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। 


সেই লক্ষ্যে প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাদানে বিশেষ সুযোগ ইতিমধ্যেই প্রত্যাহার করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। পেশার পরিচয়ে প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য নতুন করে নাম নথিভুক্ত করা যাবে না।