মুম্বই: প্রায় দু'সপ্তাহ ধরে টানাপোড়েন। তার পরেও বিক্ষুব্ধদের ফেরাতে পারেননি। আস্থাভোটের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে খালিহাতে। এমন পরিস্থিতি মহারাষ্ট্রের (Maharashtra Political Crisis) মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা করলেন উদ্ধব ঠাকরে (Uddhav Thackeray)। আর সঙ্গে সঙ্গেই রাজভবনে গিয়ে উদ্ধবের পদত্যাগের কথা জানান উদ্ধব সরকারের এক মন্ত্রী। আগে থেকেই সব ঠিক করা ছিল বলে জানা গিয়েছে। শিবসেনা সূত্রে খবর, ঢের আগেই ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন উদ্ধব। কিন্তু এনসিপি এবং কংগ্রেস বার বার তাঁকে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু সংখ্যার নিরিখে সমীকরণ আঁচ করেই সব পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন উদ্ধব। তাই ফেসবুক লাইভে যাওয়ার আগে, নিজের এক মন্ত্রীকে রাজভবনে পাঠিয়ে দেন তিনি। তিনি যেই পদত্যাগের ঘোষণা করেন, সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যপালকে বিষয়টি জানান ওই মন্ত্রী। এর পর রাতে নিজে রাভবনের উদ্দেশে রওনা দেন উদ্ধব। পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসেন রাজ্যপালের কাছে। বৃহস্পতিবার আস্থাভোটেও যোগ দেবেন না উদ্ধব। বিধান পরিষদের সদস্যতাও ছেড়েছেন।
আস্থাভোটের আগে পদত্যাগ উদ্ধবের
সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) আস্থাভোটের (Maharashtra Trust Vote) নির্দেশ দেওয়ার পরই বুধবার ফেসবুক লাইভ করেন শিবসেনা (Shiv Sena) প্রধান উদ্ধব। সেখানে তিনি বলেন, "যারা দূরে ছিল, তারা কাছে, যারা কাছে ছিল, তারা দূরে। এনসিপি, কংগ্রেসের সহকর্মীদের ধন্যবাদ। ‘রিকশাচালকদেরও মন্ত্রী-সাংসদ করেছি। তাঁরাই ভুলে গিয়েছেন। যাঁদের বড় করেছি, ক্ষমতা পাওয়ার পরে তাঁরাই ভুলে গিয়েছেন। যাঁদের সব দিয়েছি, তাঁরাই আজ বিক্ষুব্ধ। যাঁরা কিছু পাননি, তাঁরাই এখন পাশে।"
রাজ্যপালের উদ্দেশে উদ্ধব আরও বলেন, "দেড় বছর বিধান পরিষদের যে তালিকা আটকে রয়েছে, তার অনুমোদন দিন।" বিক্ষুব্ধ শিবসেনা বিধায়কদের উদ্দেশে উদ্ধব বলেন, "আপনারা কীসে অখুশি, সুরাত-গুয়াহাটি না গিয়ে, মাতোশ্রীতে এসে বলতে পারতেন। আপনাদের আবেগকে সম্মান করি, মাতোশ্রীতে এসে বলতেই পারতেন আপনারা।"
বৃহস্পতিবার আস্থাভোটেও অংশ নেবেন না উদ্ধব
পদত্যাগের ঘোষণা করতে গিয়ে উদ্ধব বলেন, "‘কার কাছে কত সংখ্যাগরিষ্ঠতা, তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমি কোনও কিছুতে ভয় পাই না। শিবসেনা এবং মারাঠাদের জন্য আজীবন কাজ করেছি। মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়া নিয়ে কোনও আফশোস নেই। মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করছি আমি। মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়া নিয়ে কোনও দুঃখ নেই। আমার কাছে শিবসেনা রয়েছে।"
দীর্ঘ দিনের শরিক বিজেপি-র সঙ্গ ছেড়ে আড়াই বছর আগে মহারাষঅট্রে এনসিপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গড়েন উদ্ধব। তাঁর হাত ধরেই ঠাকরে পরিবারের নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রবেশ। এনসিপি এবং কংগ্রেস, দুই শরিকের অনুরোধেই মুখ্যমন্ত্রী হন উদ্ধব। কিন্তু সম্প্রতি উদ্ধবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন শিবসেনার বিধায়ক একনাথ শিন্ডে। এনসিপি, কংগ্রেসের সঙ্গ ছেড়ে বিজেপি-র হাত ধরতে হবে বলে দাবি করেন তিনি। এর পর একে একে বিক্ষুব্ধদের ভাঙিয়ে অসমে গিয়ে ঘাঁটি গাড়েন। সেই থেকে বিজেপি-র সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া নিয়ে নানা জল্পনা শোনা যাচ্ছিল। তার পর দেবেন্দ্র পড়নবীশ মঙ্গলবারই গিয়ে উদ্ধব সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন। তার বিরুদ্ধে আদালতে গেলেও, সুপ্রিম কোর্ট এ দিন আস্থাভোটের সপক্ষেই রায় দেয় শীর্ষ আদালত।