কলকাতা: বিশ্বজুড়ে থাবা বসাচ্ছে মুখ বা মুখগহ্বরের ক্যানসার (oral cancer)। বাদ নেই ভারতও। মুখগহ্বরের ক্যানসারে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত আমাদের দেশেই। তথ্য বলছে, সারা পৃথিবীতে মুখগহ্বরের ক্যানসারে যতজন আক্রান্ত। তার মধ্যে ৭৫ শতাংশই ভারতে। ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, কারও পরিবারে ক্যানসারের প্রবণতা থেকে থাকলে আরও বেশি করে সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
গবেষণায় জানা গিয়েছে, পৃথিবীতে মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত প্রতি ৫ জনের মধ্যে ৪ জনই তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের অভ্যাস রয়েছে। ভারতে ব্যাপকহারে তামাক ও তামাকজাত নেশাদ্রব্য ব্যবহারের কারণেই দেশে ব্যাপকহারে বাড়ছে মুখের ক্যানসার, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিপদ কমাতে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি উদ্যোগে চলছে সচেতনতার প্রচার। নেশাসামগ্রীর প্যাকেটে বৃদ্ধি করা হয়েছে সতর্কবার্তার আয়তন। সিনেমার পর্দায়, টিভির পর্দাতেও চলছে প্রচার। তবুও কমছে না বিপদ।
মুখগহ্বরের ক্যানসার কী?
ঠোঁট ও তার চারপাশে, মুখের ভিতরের ত্বকে এবং জিভের দুই তৃতীয়াংশে এই ধরনের ক্যানসার হয়ে থাকে। মাড়িতেও এই ধরনের ক্যানসার হয়ে থাকে। মুখগহ্বর থেকে ঘাড়ের দিকেও ছড়াতে পারে এই ধরনের ক্যানসার।
বিপদ কখন
পরিবারের কারও যদি আগে ক্যানসারে (cancer) আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। তাহলে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসকদের মতে, পারিবারিক ইতিহাসে যদি এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার এক বা একাধিক ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে সেই পরিবারের কারও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ায় ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। দীর্ঘদিন ধরে তামাক (tobacco) বা তামাকজাত নেশাদ্রব্য ব্যবহারের অভ্যাস থাকলে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। সুপারি (betel nut) খাওয়ার প্রবণতা থাকলেও মুখগহ্বরের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভারতে অনেকেই পানের সঙ্গে সুপারি খেয়ে থাকেন। মুখগহ্বরের ক্যানসারের দাপটের পিছনে সেটাও একটা কারণ।
সতর্ক হবেন কখন
মুখের মধ্যে কোনও অংশে দীর্ঘদিন ঘা (ulcer) হয়ে থাকলে। সেটা কোনওভাবেই যদি না কমে।
মুখের ভিতরের ত্বকে বা জিভে যদি সাদা বা লাল বা বেগুনি রংয়ের ছোপ (patch) তৈরি হয়।
জিভে বা মাড়িতে যদি ফোলাভাব থাকে। জিভে অসাড়ভাব থাকলে।
দীর্ঘদিন ধরে কানের ব্যথা হলে
মুখের ভিতরের কোথাও অস্বাভাবিক রক্তপাত হলে
ঘাড়ে যদি কোনও ফোলাভাব (lump) দেখা যায়
খেয়াল থাকুক জীবনযাত্রায়
যে কোনওরকম নেশা থাকলে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।
ডায়েটে থাকুক স্বাস্থ্যকর খাবার। প্রতিদিনের খাবারে কমানো উচিত চিনির মাত্রা। রেড মিট জাতীয় মাংসেও লাগাম প্রয়োজন।
মুখ, দাঁত ও মুখের ভিতরের স্বাস্থ্যে নিয়মিত নজর রাখা দরকার। কোনওরকম সমস্যা হলেই সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বিপদে ভয় নেই
মুখগহ্বরের ক্যানসারে মৃত্যুহার অনেক বেশি। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একদম শেষদিকে এই রোগ ধরা পড়ে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (world health organisation) জানাচ্ছে, স্তন ক্যানসার (breast cancer), সার্ভিকাল ক্যানসার (cervical cancer), কোলোরেক্টাল ক্যানসারের (colorectal cancer) মতো মুখ গহ্বরের ক্যানসারেও সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি প্রথম দিকেই রোগ ধরা পড়ে।