নয়াদিল্লি: জিয়নকাঠি ছোঁয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রত্যেক বার মাঠে নামেন তাঁরা। কিন্তু মরসুমি রাজনীতিকের তকমা আর ঘোচে না। বৃহস্পতিবার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে (Five States Assembly Elections 2022) ফের প্রশ্নের মুখে কংগ্রেস (Congress) সাংসদ রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi) এবং দলনেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার (Priyanka Gandhi Vadra) নেতৃত্বগুণ। পাঞ্জাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা তো দূর, মুখরক্ষার মতো আসনও পায়নি কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশে নামমাত্র একটি আসনই পেয়েছে তারা। আর তাতেই অস্তিত্বসঙ্কটে কংগ্রেস।
২০১৪-র পর থেকেই একের পর এক রাজ্য থেকে মুছে গিয়েছে কংগ্রেস। বুধবার পর্যন্ত দেশের তিন রাজ্যে তাদের মুখ্যমন্ত্রী ছিল—রাজস্থান, পাঞ্জাব এবং ছত্তীসগঢ়। বৃহস্পতিবার সেই তালিকা থেকে বাদ গেল পাঞ্জাবের নাম। ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র এবং তামিলনাড়ুতে জোট সরকারে ছোট শরিক হিসেবে সামিল রয়েছে তারা। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এখনও মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, হিমাচলপ্রদেশ, মেঘালয়, গুজরাত, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, কর্নাটক, তেলেঙ্গানা এবং মিজোরামে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তার আগে কংগ্রেসের হাতে একটিও রাজ্য বেঁচে থাকবে কি না, সন্দিহান অনেকেই।
আর তাতেই রাহুল-প্রিয়ঙ্কার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ খাতায় কলমে ২০১৯ সাল থেকে খাতায় কলমে অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে সনিয়া গাঁধী কাজ চালিয়ে গেলেও, দুই ছেলেমেয়ের হাতেই যে কংগ্রেসের লাগাম রয়েছে, তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে গত কয়েক বছরে। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনেও দুই ভাইবোনকেই কর্তৃত্ব করতে দেখা গিয়েছে। বিদ্রোহের মাসুল হিসেবে কোণঠাসা হয়ে থেকেছেনম মণীশ তিওয়ারি, আনন্দ শর্মা, কপিল সিব্বলের মতো অভিজ্ঞ নেতাদের।
কিন্তু দিনের শেষে তাতে লাভের আখের ঘরে তুলতে পারলেন না রাহুল-প্রিয়ঙ্কা। পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলের রীতি উত্তরাখণ্ডে। কিন্তু এ বার দ্বিতীয় বারের জন্য বিজেপি-ই জয়ী হয়েছে। গোয়ায় সংগঠনই ধরে রাখতে পারেনি কংগ্রেস। যে কারণে লুইজিনহো ফালেরিওর মতো নেতাকে তৃণমূলে যোগ দিয়ে হয়। ফ্রান্সিসকো সারডিনহা, এমনকি পি চিদম্বরমের মতো অভিজ্ঞ নেতাকেও কোণঠাসা করে রাখা হয় বলে অভিযোগ। অথচ গোয়ায় ভোটের প্রচারে গেলেও, দলের সংগঠন নিয়ে রাহুল মাথা ঘামাতে চাননি বলে অভিযোগ। উত্তরাখণ্ডেও হরিশ রাওয়তের উপর তিনি সব ছেড়ে দিয়েছিলেনম বলে সূত্রের খবর। মণিপুরে একসময় সরকার থাকলেও, এ বার মাত্র ৯টি আসন পেয়েছে তারা। প্রচারে কোনও বড় নেতাকেই দেখা যায়নি।
পঞ্জাবে কার্যত নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মেরেছে কংগ্রেস। নভজ্যোত সিংহ সিধুকে নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অশান্তি, অব্যবস্থা চলছিল। কিন্তু ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহের বিরুদ্ধে সিধুকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই রাহুল বাড়তে দেন বলে অভিযোগ। তাতে টালমাটাল অবস্থা হয় কংগ্রেসের। বিজেপি-র উপর ক্ষুব্ধ কৃষকদের কাছে টানার পরিবর্তে, মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার নিয়ে প্রকাশ্য কোন্দল চলছিল। রাহুল যখন সিধুর উপর লাগাম টানলেন এবং চরণজিৎ চান্নিকেই দলের মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যাশী ঘোষণা করলেন, তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে প্রিয়ঙ্কার উপর নির্বাচনী দায়িত্ব থাকলেও, প্রচারে গা ছাড়া অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা-কর্মীরাই। তাঁদের মতে, হাথরসকাণ্ড, লখিমপুর খেরির ঘটনা এবং একের পর এক ভুয়ো এনকাউন্টারের অভিযোগ নিয়ে সমাজবাদী পার্টি যতটা সক্রিয় ছিল, তার সিকিভাগও দেখা যায়নি কংগ্রেসের তরফে। রাহুল-প্রিয়ঙ্কা যদিও হাথরসের পীড়িত পরিবারের বাড়িতে যান, প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান, কিন্তু সেটা ওই একবারই। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘস্থানীয় আন্দোলনের গরজ দেখাননি কেউই। কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রেও সংসদভবন এবং টুইটারেই তাঁদের প্রতিবাদ সীমিত ছিল বলে অভিযোগ। তাই মরসুমি রাজনীতিকের তকমা কাটিয়ে রাহুল-প্রিয়ঙ্কা দলকে আদৌ চাঙ্গা করতে পারবেন কি না, পাঁচ রাজ্যের ফলাফল ঘোষণার পর তা নিয়ে সংশয় আরও বাড়ল।