মুম্বই: ধূমকেতুর আদলে বহুদূর বিস্তৃত আলোর বিচ্ছুরণ। আর তার সম্মুখ ভাগে আগুনের গোলা। দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। আর পতঙ্গ রঙ্গে ধায় প্রবাদকে সার্থক করে গোলার অভিমুখেই ধেয়ে চলেছে অসংখ্য আলোর সরলরেখা। শনিবার মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশের আকাশে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ল। এক পলকের দেখায় মহাজাগতিক বস্তু (Space Debris) বলেই ঠাহর হয়। কিন্তু সেটি চানা মহাকাশযান হতে পারে বলেও জল্পনা শুরু হয়েছে। তাই রাতের আকাশে আবির্ভূত ওই দৃশ্য নিয়ে দ্বিখণ্ডিত নেট দুনিয়া।


রাতের আকাশে রহস্যময় দৃশ্য ঘিরে তোলপাড় 


মহারাষ্ট্রের নাগপুর এবং মধ্যপ্রদেশের জাবুয়া ও বারওয়ানি জেলায় থেকে রাতের আকাশে ওই দৃশ্য চোখে পড়েছে। রাত সওয়া ১০টা নাগাদ বিষয়টি সামনে আনে সংবাদ সংস্থা এএনআই। তার পর থেকে নেটমাধ্যম ছেয়ে গিয়েছে রহস্যময় ওই দৃশ্যের ছবি এবং ভিডিও-য়। ধ্বংসের দিকে ধেয়ে যাওয়ার আগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঘষা লেগে একাধিক উল্কা যেমন অগ্নিগোলকের আকারে সম্মুখে এগিয়ে যায় (Meteor Shower), সেই সঙ্গে রাতের আকাশ ভেদ করে ছড়িয়ে যায় আগুনের ছটা, তার সঙ্গেই এই ঘটনার তুলনা টেনেছেন অনেকে। তাই উল্কাবৃষ্টি ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে ওই দৃশ্যকে বর্ণনা করেছেন তাঁরা।


কিন্তু এই দৃশ্যের পিছনে মহাকাশ অনুসন্ধান যোগও দেখতে পাচ্ছেন বহু মানুষ। তাঁদের মতে ভারতের আকাশের উপর দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল চিনের তৈরি  ‘চাঙ ঝেং ৫বি’ রকেট (Chang Zheng 5B Rocket)। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই ক্ষেপণাস্ত্র প্রথম রকেট করে চিন। এই রকেট তেমন মারাত্মক নয়, জ্বলতে জ্বলতে আকাশেই ছাই হয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে। শনিবার ভারতের আকাশে পৃথিবীমুখী সেই  ‘চাঙ ঝেং ৫বি’ রকেটেরই দেখা মিলেছে বলে নিশ্চিত বহু মানুষ।



মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা, ম্যাসাচুসেটস-এর সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে কর্মরত হিসেবে টুইটারে পরিচয় দিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী জনাথান ম্যাকডাওয়েল। তবে ৫বি নয়, চিনা রকেট চাঙ ঝেং ৩বি-র অবশিষ্টাংশ ছাড়া ওই রহস্যময় বস্তু অন্য কিছু নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। ওই বস্তু কোনও মহাকাশ যান কি না, তাঁর কাছে জানতে চান এক ব্যক্তি। উত্তরে জনাথান লেখেন, ‘আমার বিশ্বাস, চিনা রকেটের পুনরায় আগমন ঘটল। Y77 ক্রমাঙ্কের চাঙ ঝেং ৩বি রকেটের স্টেজ এটি, ২০২১-এর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম যার উৎক্ষেপণ করে চিন’। কিছু ক্ষণ পরে ওই রকেট আকাশে আবির্ভূত হওয়ার কথা ছিল, তার আগেই হিসেব মিলে যাচ্ছে বলেও জানান জনাথান।



মহাকাশ অভিযানে চিনা রকেটের নানা আখ্যান


চাঙ ঝেং ৫বি রকেট চিনের উচ্চাকাঙ্খী লং মার্চ রকেট প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। মহাকাশে (Space Programme) নির্দিষ্ট স্পেস স্টেশনে প্রয়োজনীয় রসদ এবং মানব সাহায্য পাঠানোর জন্য এই প্রকল্প গৃহীত হয়। চন্দ্র এবং মঙ্গল অভিযানে অনুসন্ধানমূলক কাজে সাফল্য পেতেই এই রকেটের নির্মাণ। মহাকাশে নতুন স্পেস স্টেশন তৈরিতেও এই রকেট ব্যবহার করছে চিন। এতে একটি লঞ্চ ভেহিকলে এক বা একাধিক রকেট সংযুক্ত থাকে। প্রত্যেকটির নিজ নিজ ইঞ্জিন এবং চালকযন্ত্র থাকে। জ্বালানি যত পুড়তে থাকে, ততই দ্রুত গতিতে এগোতে থাকে রকেট।


এর আগে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ার আকাশেও চিনের চাঙ ঝেং ৩বি রকেটের দেখা মেলে। উৎক্ষেপণের ৩০ মিনিট পর সেটি আকাশে দেখতে পান সেখানকার বাসিন্দারা। সে বার পৃথিবীর কক্ষপথে এক সপ্তাহের বেশি পাক খাওয়ার পর নেমে আসে সেটি। পরে তার ধ্বংসাবশেষের টুকরো উদ্ধার হয়।


এই ধরনের রকেটের অবতরণের জন্য এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট প্রবেশ পথ তৈরি করতে পারেনি চিন। তবে উন্নত প্রযুক্তিতে আকাশেই সেটি যাতে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, সেই ব্যবস্থা করেছে তারা। তবে গতবার ওই রকেট শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম, মলদ্বীপের উত্তরে ভারত মহাসাগরে ভেঙে পড়ে। সেই সময় এই ধরনের ১০টি রকেট উৎক্ষেপণের কথা ছিল চিনের।


আরও পড়ুন: Gautam Adani Update: ২৪০০ কোটি ডলার বৃদ্ধি সম্পত্তির, মাস্ক-বেজোসদের সঙ্গে প্রথম দশে আদানি