নয়াদিল্লি: মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের সঙ্গে কথা বলবেন রাজনাথ সিংহ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এসপারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হবে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চিনা আগ্রাসন নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। পাশাপাশি, কথা হতে পারে আপৎকালীন ভিত্তিতে কিছু সামরাস্ত্র ও রণ-সরঞ্জাম হস্তান্তর নিয়েও।
সম্প্রতি, ভারতীয় সেনাকে লাদাখে চিনা গতিবিধি সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওই তথ্যের অংশ হিসেবে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয় মার্কিন সামরিক উপগ্রহ চিত্র। সূত্রের খবর, সেগুলি থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য় হাতে পেয়েছে সেনা। সেইমতো নিজদের কৌশল অবলম্বন করছে।
এছাড়া, ভারতের এই মুহূর্তে কী কী অস্ত্র ও রণসম্ভার প্রয়োজন তার তালিকাও চেয়ে পাঠিয়েছে আমেরিকা। জানা গিয়েছে, চিনের বিরুদ্ধে সংঘাতের এই পরিস্থিতিতে ভারতকে সাহায্য করার সর্বান্তকর আশ্বাস দিয়েছে ওয়াশিংটন। মার্কিন প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ভারতের যা যা প্রয়োজন, তা যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
সূত্রের খবর, রাজনাথের সঙ্গে এদিন এসপারের বৈঠকে সেই সংক্রান্ত আলোচনাও হবার কথা। জানা গিয়েছে, এমার্জেন্সি রুটে ভারতকে "এক্সক্যালিবার" আর্টিলারি দিতে তৈরি আমেরিকা। এই বিশেষ গোলার পাল্লা ৪০ কিলোমিটার। এই গোলা ভারতীয় সেনার ব্যবহৃত মার্কিন নির্মিত এম৭৭৭ আল্ট্রা লাইট হাউইৎজার সহ বিভিন্ন ধরনের কামানের সঙ্গে ব্যবহার করা যাবে।
চিনের বিরুদ্ধে এই সংঘাতে, ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে একাধিক মিত্র-রাষ্ট্রও। ভারতকে আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছে তারা। সেই তালিকায় রয়েছে ফ্রান্স, রাশিয়া ও ইজরায়েল। সম্প্রতি, রুশ সফর থেকে ফিরেছেন রাজনাথ সিংহ। জানা গিয়েছে, সময়ের আগেই ভারতকে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দিতে রাজি হয়েছে মস্কো।
সেনার সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই সিস্টেম ২০২১ সালে আসার কথা ছিল। কিন্তু, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারত অনুরোধ করে তিনমাসের মধ্যে সরবরাহ করতে। দীর্ঘদিনের বন্ধু এই অনুরোধ রাখতে রাজি রাশিয়া। ইতিমধ্যেই, লাদাখ সীমান্তে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়েছে চিন। তাই পাল্টা এই ক্ষেপণাস্ত্র অবিলম্বে বসানোর প্রয়োজন পড়েছে ভারতেরও।
এর পাশাপাশি, ভারতকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র জরুরি ভিত্তিতে দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসন। সেই তালিকায় রয়েছে গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য বম্ব, ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী মিসাইল ও ম্য়ান-পোর্টেবল ডিফেন্স সিস্টেম (ম্যানপ্যাড)।
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েলও। সূত্রের খবর, স্থল ও বায়ুসেনার জন্য বিশেষভাবে নির্মিত বারাক-৮ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ভারতকে ঋণে দিয়েছে এই বন্ধু রাষ্ট্র। এছাড়া, নিজেদের অত্যাধুনিক "অ্যারো", "আয়রন ডোম" ও "ডেভিড'স স্লিং" সিস্টেম দিতে রাজি ইজরায়েল।
এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অ্যারো সিস্টেম। প্রসঙ্গত, এটি হল বিশ্বের প্রথম সিস্টেম যা বিশেষ করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে পারদর্শী। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, ক্রুজ মিসাইল মতো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করা সহজ নয়। কারণ, তা বায়ুমণ্ডলের অনেক ওপরে চলে যায়, তারপর নীচে নামে।
ফলত, যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে কপ্টার, ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম থাকলেও, ব্যালিস্টিক মিসাইলের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ বিশ্বে খুব একটা বেশি নেই। তাই ইজরায়েলের "অ্যারো" সিস্টেম একটি বিপ্লব বলা যেতে পারে।
অন্যদিকে, ৪-৭০ কিমি পাল্লার মধ্যে স্বল্পপাল্লার রকেট ও আর্টিলারি শেল ধ্বংসে পারদর্শী "আয়রন ডোম" সিস্টেম। আবার, ৪০-৩০০ কিমি পাল্লার মধ্যে দূরপাল্লার রকেট ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম "ডেভিড'স স্লিং" সিস্টেম।
জুলাই মাসের শেষেই ভারতে অন্তত ৪টি রাফাল যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে ফ্রান্স। এই যুদ্ধবিমানগুলি "কমব্যাট-রেডি" হয়ে আসবে। অর্থাৎ, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। এককথায়, এখানে পৌঁছেই যুদ্ধে অংশ নিতে পারবে ওই যুদ্ধবিমানগুলি। বিশ্বের সর্বাধুনিক আকাশ থেকে আকাশ বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ "মিটিয়র" ও "স্ক্যাল্প" ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত এই বিমানগুলি দেশের সীমার মধ্যে থেকেই শত্রুর বিমান, কপ্টার, ড্রোন ও মিসাইল ধ্বংস করতে অদ্বিতীয়।