নয়াদিল্লি: জন্তুজানোয়ারের ওপর ভারত বায়োটেক ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) তৈরি, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের স্বীকৃতি পাওয়ার দৌড়ে থাকা কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষা সফল হয়েছে। ভারতে প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে, জন্তুজানোয়ারের শরীরে প্রয়োগের পর উল্লেখযোগ্য প্রতিরোধশক্তি তৈরি করেছে কোভ্যাক্সিন। ভারত বায়োটেক এমনই দাবি করেছে। ভারতের ১২টি সংস্থায় কোভ্যাক্সিনের ট্রায়াল চলছে। হায়দরাবাদের কোম্পানিটি জানিয়েছে, একদল বাঁদরের ওপর ট্রায়াল চালিয়ে পাওয়া তথ্যে এই সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের রোগ প্রতিরোধ শক্তির প্রমাণ মিলেছে। তারা ট্য়ুইট করেছে, ভারত বায়োটেক গর্বের সঙ্গে জন্তুর শরীরে কোভ্যাক্সিন প্রয়োগের ফল ঘোষণা করছে। সেই ফল হল, একটি জীবন্ত ভাইরাল চ্যালেঞ্জ মডেলের মধ্য়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে।


বিবৃতি দিয়েও ভারত বায়োটেক বলেছে, রেসাস ম্যাকাকসের (ছোট লেজওয়ালা বাঁদর) ওপর একটি ‘ইনঅ্যাকটিভেটেড’ সার-কো ভি-২ ভ্য়াকসিন (বিবিভি১৫২) বা কোভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা, প্রতিরোধ ক্ষমতা পরীক্ষা করেছে তারা। ২০টি ম্যাকাকসকে ৫ জনের চারটি দলে ভাগ করা হয়। একটি দলকে প্লেসবো দেওয়া হয়। বাকি তিনটি দলকে তিন ধরনের ভ্য়াকসিন দেওয়া হয় ০ ও ১৪ দিনে। দ্বিতীয় ডোজের পর সব ম্যাকাকসকে সার্স-কোভ-২ এর চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলা হয়। পরীক্ষামূলক ভ্য়াকসিন প্রয়োগের তিন সপ্তাহ থেকে দেখা যায়, ক্রমশ সার্স-কোভ-২ কেন্দ্রিক আইজিজি ও প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি টিটার্স বাড়ছে ওদের মধ্যে।
ভারত বায়োটেক তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, সংক্ষেপে বলতে গেলে সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটিকে তেজি প্রতিরোধী ক্ষমতা সৃষ্টি করতে দেখা গিয়েছে। বাঁদরদের মধ্যে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকিয়ে দিয়েছে। ওদের নাকের ফুটো, গলা, ফুসফুসের টিস্যুতে ভাইরাস ছড়ানো কমেছে। ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা দলগুলির মধ্যে নিউমোনিয়ার কোনও লক্ষণ, অস্তিত্ব দেখা যায়নি হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষায়, যেমনটা হয়নি প্লেসবো দেওয়া দলটির বেলায়। দুটি ভ্য়াকসিন ডোজ দেওয়া বাঁদরদের মধ্যে কোনও ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
দেশের ওষুধ সংক্রান্ত নিয়ামক কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর জুলাইয়ে হিউম্যান ট্রায়াল বা মানব শরীরে পরীক্ষা শুরু করে ভারত বায়োটেক। প্রথমে ১৫ আগস্ট নাগাদ কোভ্য়াক্সিন বাজারে ছাড়ার কথা ভাবা হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিকে জানিয়ে দেওয়া হয়, অন্তত সামনের বছরের আগে এধরনের ভ্যাকসিন আনা সম্ভব নয়।
দুনিয়াজুড়ে ১০০-র বেশি ভ্যাকসিন তৈরির পরীক্ষা চলছে কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলায়, যা অসংখ্য মৃত্যু ঘটানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী তীব্র আর্থিক সঙ্কট ডেকে এনেছে। তবে দৌড়ে সম্ভবত সবার আগে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাসট্রাজেনেকার যৌথ প্রয়াসে তৈরি ভ্যাকসিন। যদিও ব্রিটেনে তার পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এক স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে কিছু খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় আপাতত ট্রায়াল স্থগিত রয়েছে।