নয়াদিল্লি: হুমকির নড়চড় হল না। তীব্র বোমাবর্ষণে গাজার রাফাহ শহরের একটি মসজিদ-সহ বেশ কয়েকটি বাড়ি ধুলোয় মিশিয়ে দিল ইজরায়েল (Israel Attacks Rafah)। সূত্রের খবর, রাফাহ-য় পুরোদস্তুর হামলা আটকাতে কথাবার্তার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে কায়রোয় থাকা হামাস-প্রধান। শেষরক্ষা হবে কিনা জানা নেই। তবে রাতভর বোমাবর্ষণ করে রাফাহ-র বাসিন্দাদের আতঙ্কের চোরাস্রোত তৈরি করে ফেলেছে ইজরায়েল। ইতিমধ্যে অন্তত ৭ জনের মৃত্যুও হয়েছে বলে খবর।
জ্বলছে রাফাহ, ধোঁয়ার মেঘ খান ইউনিসে...
মিশরের সীমান্ত লাগোয়া গাজার রাফাহ শহরে গত অক্টোবর থেকেই যুদ্ধের আঁচ পড়েছে। অন্তত ২৩ লক্ষ মানুষ, প্রাণ বাঁচাতে সেখানে নানা শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রাণ আদৌ বাঁচবে কিনা, সেটা আর নিশ্চিত নয়। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু রাফাহ-অভিযানের হুঙ্কার দিয়ে রেখেছিলেন। বাস্তবেও সেই কথার কোনও নড়চড় হল না। মাঝরাতের একটু পরে ঝাঁকে ঝাঁকে বোমাবর্ষণে গুঁড়িয়ে গেল শহরের আল-ফারুক মসজিদ। লাগোয়া বেশ কিছু বাড়ির দরজা-জানলা উড়ে কোথায় চলে গিয়েছে, কেউ জানে না। শহর প্রশাসনের কাছে যা হিসেব, তাতে মধ্য রাফাহ-য় অন্তত ৪টি এবং দক্ষিণাংশে নিদেনপক্ষে ৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত।
এই বাড়িগুলির একটি ছিল দিনা অল-শেয়ারের। মাঝরাতের হামলায় ভাই-সহ পুরো পরিবারকে হারিয়েছেন দিনা। প্রলাপ বকে যাচ্ছেন তার পর থেকে, 'আমার প্রিয়জনদের কেড়ে নিল ওরা, আমার হৃৎপিণ্ডের একাংশ কেটে নিল।' ৩৪ বছরের যুবক জেহাদ আবুমাদ নামে আর এক বাসিন্দার চোখেমুখে আবার ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। বললেন, 'আমরা দু'চোখের পাতা এক করতে পারিনি। বোমাবর্ষণ ও বিমানের চক্কর কাটার আওয়াজ রাতভর চলেছে।' এর মধ্যে কাছেই কোনও কোনও শিবির থেকে নাগাড়ে শিশুর কান্নার আওয়াজ কানে এসেছে তাঁদের। কেউ কিছু করতে পারেননি। সাধারণ মানুষ বড় অসহায়, জানালেন যুবক।
রাফাহ-র ঠিক উত্তরে খান ইউনিসের দিক থেকে শুধুই ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা গিয়েছে। গত মাসে সেখানে অভিযান চালিয়েছে ইজরায়েল। খান ইউনিস-ই গত মাসে তাদের হামলার মূল লক্ষ্য ছিল। এখন সেখানকার আকাশে শুধু কালো ঘন, ধোঁয়ার মেঘ পাক খায়।
সার্বিক ভাবে...
গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেব, শেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯৭ জনের প্রাণ গিয়েছে, জখম অন্তত ১৩০। এর মধ্যে রাফাহ অভিযান। ঘটনা হল, প্রাণ বাঁচাতে যাঁরা রাফাহ-য় আশ্রয় নিয়েছিলেন, এবার সেখানে পুরোদস্তুর হামলা হলে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না তাঁদের। সেক্ষেত্রে কী হবে? মানবিকতার খাতিরে ইজরায়েলের কাছে সংঘর্ষবিরতির আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের ত্রাণ বিষয়ক সংগঠনগুলি। লিখেছে, 'যত্রতত্র রোগের বাড়বাড়ন্ত, খরা প্রায় দোরগোড়ায়। পানীয় জল একেবারে তলানিতে। ন্যূনতম পরিকাঠামো শেষ। খাদ্য উৎপাদন একরকম বন্ধের মুখে, হাসপাতালগুলি রণক্ষেত্র হয়ে গিয়েছে।' এরপরও অভিযান চললে কার্যত গণহারে মৃত্যুর পরিস্থিতি হবে। কী হবে এর পর? উত্তরের আশায় দিন গুনছে রাফাহ, গাজা।
আরও পড়ুন:ছায়াযুদ্ধ থেকে সম্মুখসমরে? ইরানে গ্যাসের পাইপলাইন উড়িয়ে দেওয়ায় অভিযুক্ত ইজরায়েল