নয়াদিল্লি: হুঁশিয়ারি, হুমকির পর সটান হামলা। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যেই নয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি পশ্চিম এশিয়ায়। ইজরায়েলে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান। সম্প্রতি সিরিয়ায়র দামাস্কাসে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইজরায়েল, তারই পাল্টা হিসেবে ইজরায়েলে হামলা বলে জানিয়েছে ইরান। দেশের সামরিক বাহিনীর বিশেষ শাখা Islamic Revolutionary Guard Corps (IRGC) এই হামলা চালিয়েছে, যার প্রতিষ্ঠাতা দেশের সর্বোচ্চ শাসক আয়াতোল্লা খোমেনি। (Israel Iran War)
১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর IRGC-র প্রতিষ্ঠা। দেশের শিয়া শাসন ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে, সামরিক বাহিনীর হাত শক্ত করতে IRGC-র প্রতিষ্ঠা করেন আয়াতোল্লা। IRGC-র পৃথক পদাতিক, নৌ এবং বায়ুসেনা বাহিনী রয়েছে। সরকার বিরোধী আন্দোলন, বিক্ষোভ প্রতিহত করতে যে সশস্ত্র Basij Religious Militia নামের যে আধা সামরিক বাহিনী রয়েছে ইরানে, তাদের আদেশ-নির্দেশ দেয় এই IRGC. IRGC শুধুমাত্র আয়াতোল্লাকেই রিপোর্ট করে। (Israel Iran Conflict)
আটের দশকে ইরাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে নাগরিকদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার নেপথ্যে ছিল IRGC-র Basij Religious Militia. স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সামাজিক নীতি নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই Basij Religious Militia. খাতায়কলমে IRGC-র সৈনিকের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৫ হাজার। কিন্তু সমগ্র ইরানে কয়েক লক্ষের IRGC বাহিনী সক্রিয় বলে দাবি রয়েছে। IRGC-র আন্তর্জাতিক শাখা হল Quds Force. পশ্চিম এশিয়ায় সশস্ত্র সংগঠনগুলির উপর এর প্রভাব বিস্তর। লেবানন থেকে ইরাক, ইয়েমেন থেকে সিরিয়া, সশস্ত্র সংগঠনগুলিকে সাহায্য জোগায় Quds Force. সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের হয়ে সেখানে গৃহযুদ্ধেও অংশ নিয়েছে তারা। জঙ্গি সংগঠন ISIS-এর বিরুদ্ধে ইরাকি সেনাকেও সাহায্য করে তারা। তাদের শীর্ষ কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানি ২০২০ সালে আমেরিকায় মারা যায়, যা দুই দেশের মধ্যে সংঘাত আরও বাড়িয়ে তোলে।
IRGC-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেই গন্য করে আমেরিকা। পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনীতিকে ইরানের পক্ষে চালিত করার ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ১৯৮২ সালে লেবাননে সশস্ত্র শিয়া রাজনৈতিক আন্দোলন ‘হেজবোল্লা’র হোতাও IRGC বলে দাবি করেন অনেকে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া থেকে ইজরায়েলি আগ্রাসন প্রতিহত করার ক্ষেত্রেও বারং বার তাদের কথা উঠে এসেছে। পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সংঘাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ‘হেজবোল্লা’রও।
ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের দায়িত্ব পুরোপুরিই IRGC-র হাতে। তাদের তদারকিতেই ইরান পশ্চিম এশিয়ার বৃহত্তম ক্ষেপণাস্ত্র শক্তিতে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করেন কূটনীতিকদের একাংশ। অভিযোগ ওঠে, সিরিয়ায় সুন্নি মুসলিম জঙ্গি, উত্তর ইরাকে ইরান বিরোধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োগও করেছে IRGC. ২০১৯ সালে সৌদি আরবে অবস্থিত তৎকালীন পৃথিবীর বৃহত্তম তেল প্রক্রিয়া কেন্দ্রে যে ড্রোন হামলা হয়, তার জন্যও IRGC-র দিকে আঙুল তোলে আমেরিকা, ইউরোপ এবং সৌদি আরব। ইরান যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে।
ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও সরাসরি যুক্ত IRGC. উচ্চ সরকারি পদ থেকে পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন IRGC-র আধিকারিকরা। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যই IRGC-র প্রাক্তন আধিকারিক। আটের দশকে ইরাক যুদ্ধের পর নির্মাণ ব্যবসাতেও আধিপত্য বিস্তার করেছে IRGC. নির্মাণ ছাড়াও টেলি কমিউনিকেশন, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবসাতেও আধিপত্য রয়েছে তাদের।