জোশীমঠ: উন্নয়নের 'কোপে' জোশীমঠ। অন্তত তেমনটাই বলছেন পরিবেশবিদরা। সম্প্রতি জোশীমঠে পরপর ফাটল শুরু হতেই কার্যত আতঙ্কে কেঁপে গিয়েছে গোটা এলাকা। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, কেন ফাটল হয়েছে তা জানতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে, উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলও তৈরি করা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি ট্যুইট ভাইরাল হয়েছে। সেখানে পরিবেশবিদ বিমলেন্দু ঝা অভিযোগ করেছে ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের জন্যই জোশীমঠের এই করুণ পরিস্থিতি। তাঁর আশঙ্কা এখান থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই। তাঁর অভিযোগ, একটি টানেল করার সময় ওই এলাকায় একটি Acuifer বা ভূগর্ভস্থ জলাধারে ফাটল ধরিয়েছে NTPC. তার জেরেই এই ঘটনা ঘটছে।
যদিও ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে NTPC. তাদের দাবি, জোশীমঠের মাঝখান দিয়ে তাদের টানেল যায়নি। টানেলটি মাটির তলায় কয়েকশো কিলোমিটার নীচে বলেও তাদের দাবি।
বিমলেন্দু ঝায়ের দাবি, টানেল বোরিং মেশিন নিয়ে অ্যাকুইফারে ফাটল করে দেওয়া হয়েছে। এই কারণেই জোশীমঠের একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ঘরে কাদামাটি মেশানো জল বেরোচ্ছে। এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে মাটির তলার কোনও অ্যাকুইফারে ফাটল ধরেছে। যার ফলেই ভূমিধস শুরু হয়েছে।
২০২১ সালের হড়পা বানেও বহু ক্ষতি হয়েছিল এই এলাকার। মৃত্যুও হয়েছিল বহু। তাঁর অভিযোগ এগুলো শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। হিমালয়ের ভঙ্গুর অবস্থা, হিমালয়ের ভৌগোলিক পরিস্থিতি নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্যই এমন ঘটনা ঘটেছিল। আর্থিক লাভের জন্য এমন এমন কাজ হয়েছে যে তার জন্যই মাশুল গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের।
আগেও আশঙ্কা:
জোশীমঠ এবং তার আশপাশের এলাকায় একাধিক প্রকল্প শুরু হয়েঠিল। ২০০৯-২০১০ সালে থেকেই পরিবেশবিদদের একাংশ সেগুলি নিয়ে বারবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। NTPC- এর প্রকল্প নিয়েও তারা আশঙ্কা করেছিলেন যে এর কারণেই ওই এলাকার ভূতাত্ত্বিক বিন্যাস ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০০৯ সালেও বিষ্ণুগড় HE প্রজেক্ট টানেল করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল একটি অ্যাকুইফার। ২০১৯ সালে তপোবনেও একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির সময় একটি অ্যাকুইফার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই কারণেই ধীরে ধীরে ভূমিধসের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জোশীমঠের পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বারবার এলাকায় যাচ্ছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। জোশীমঠের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ৪৫ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: রান্নাবাড়া ভারতে, ঘুম মায়ানমারে, ভারতের এই গ্রামের ‘আজব’ উপাখ্যান