নয়াদিল্লি: দেশের ৫০তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড় (CJI DY Chandrachud)। বুধবার সকালে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করালেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। রাষ্ট্রপতি ভবনেই সারা হল আনুষ্ঠানিকতা। মঙ্গলবারই প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেন বিচারপতি উমেশ উদয় ললিত। মাত্র ৭৪ দিন পদে ছিলেন তিনি (Supreme Court)।


দেশের ৫০তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন


আগামী দু'বছর পদে থাকবেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর মেয়াদ শেষ হবে তাঁর। ২০১৬ সালের ১৩ মে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে উন্নীত হন। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সাংবিধানিক বেঞ্চের অংশ থেকেছেন। অযোধ্যার জমি বিবাদ মামলা, গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারের মতো মামলার অংশ থেকেছেন। 


শুধু তা নয়, সমকামী সম্পর্ককে অপরাধমুক্ত করার নেপথ্যেও ছিলেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। ৩৭৭ ধারার আংশিক প্রত্যাহারও তাঁর হাতেই। এ ছাড়াও আধার তথ্যে নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার ভঙ্গ, শবরীমালা মামলারও অংশ থেকেছেন। করোনার সময় সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে একাধিক মামলা গ্রহণ করেন তিনি। অবিবাহিত মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকার নিয়েও সম্প্রতি রায় শোনায় তাঁর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। 


বাবা যশবন্ত বিষ্ণু চন্দ্রচূড়ও দেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। দেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধান বিচারপতি তিনি। দীর্ঘ সাত বছর পদে আসীন ছিলেন। কিন্তু বিচারপতি হিসেবে বাবার দেওয়া রায়ই দু'-দু'বার পাল্টে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। 


আরও পড়ুন: Nitin Gadkari: ‘ওঁর কাছে ঋণী থাকবে দেশ’, মোদির মন্ত্রীর মুখে মনমোহন প্রশস্তি


সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন এলএলবি। আমেরিকার হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে এলএলএম এবং ডক্টরেটও করেন। 


সুপ্রিম কোর্টের পাশাপাশি বম্বে হাইকোর্টেও প্র্যাকটিস করেছেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। ইউনর্সিটি অফ মুম্বইয়ে তুলনামূলক সাংবিধানিক আইন বিষয়ের অধ্যাপনাও করেছেন। ১৯৯৮ সালে তাঁকে সিনিয়র অ্যাডভোকেট নিয়োগ করে মুম্বই হাইকোর্ট। ওই বছরই অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল হন এবং বিচারপতি নিযুক্ত হন। 


বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতিও নিযুক্ত ছিলেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তাঁর হাত ধরে এই প্রথম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দেশ বাবা ও ছেলেকে পেল। তবে প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর নিযুক্তি নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। কারণ কোনও কিছুর সঙ্গে আপস না করার জন্যই পরিচিত তিনি। নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষেও বরাবর সওয়াল করে এসেছেন। উৎকণ্ঠার পরিবশেও সুস্থির, বিচক্ষণ আচরণের জন্য পরিচিত।


২০১৭ সালে গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার মামলায় প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বক্তব্য ছিল, "গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার মানবজীবনে অপরিহার্য।" এর সপক্ষে রায় দিতে গিয়ে বাবার আগের রায় উল্টে দেন তিনি। সমকামিতাকে অপরাধমুক্ত করতে গিয়ে বলেন, "সামাজিক স্বীকৃতি পেতে ১৫০ বছরের লড়াই বড্ড বেশি সময়।" আধার তৈরিতে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংক্রান্ত গোপনীয়তা রক্ষার কথাও বলেন তিনি।


২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর মেয়াদ শেষ হবে


শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশের উপর বনিষেধাজ্ঞাকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় সমাজকর্মীদের গ্রেফতারিতে গণতন্ত্রে ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার থাকা বাঞ্ছনীয় বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় । সম্প্রতি ধর্ষণের ক্ষেত্রে দুই আঙুলের পরীক্ষাকেও বেআইনি ঘোষণা করেন।