নয়া দিল্লি : আজ গোটা দেশ কার্গিল বিজয় দিবস উদযাপন করছে। অপারেশন বিজয়-এর সাফল্যস্বরূপ এই দিনটি পালিত হয় ভারতে। ১৯৯৯ সালে ভারতীয় সেনা পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের হটিয়ে ভারতীয় এলাকা শত্রুমুক্ত করে। জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল-দ্রাস সেক্টর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় পাকিস্তানিদের। পাকিস্তানি সেনা যেসব জায়গার দখল নিয়েছিল, তা দখলমুক্ত করার অভিযানে নেমে ভারতীয় সেনার একাধিক জওয়ান শহিদ হন। সেইসব জওয়ান ও ভারতীয় সেনার সাফল্য উদযাপন করা হয় প্রতি বছরের এই দিনটি। যা কার্গিল বিজয় দিবস হিসেবে পরিচিত।


১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের একাধিক বীর সেনার কথা শোনা যায়। তাঁদেরই মধ্য়ে অন্যতম ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা। যিনি পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। কার্গিল যুদ্ধের পর ক্যাপ্টেন বাত্রাকে মরণোত্তর সম্মানে সম্মানিত করা হয়। তাঁকে ভূষিত করা হয় ভারতের সবথেকে বড় সামরিক পুরস্কার পরমবীর চক্রে। এহেন ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার বীর-কাহিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় গোটা দেশে।


১৯৭৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জন্ম ক্যাপ্টেন বাত্রার। ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর মিলিটারি জীবনের শুরু। ভারতীয় সেনার জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলসের ১৩ তম ব্যাটেলিয়নের সঙ্গে। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময় যখন তাঁকে দ্রাস সেক্টরে ডেকে পাঠানো হয়, তখন উত্তরপ্রদেশে পোস্টেড ছিলেন ক্য়াপ্টেন বাত্রা। ৬ জুন তিনি দ্রাসে পৌঁছান। রাজপুতানা রাইফেলসের সেকেন্ড ব্যাটেলিয়নে তাঁকে রিজার্ভে রাখা হয়। সেই সময় তাঁকে ৫৬ মাউন্টেন ব্রিগেডে রিপোর্ট করতে হত। জোরদার চলছে কার্গিল যুদ্ধ। সেই সময় রাজপুতানা রাইফেলসকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে টোলোলিং মাউন্টেন রিজ পুনর্দখলের জন্য পাঠানো হয়। ক্যাপ্টেন বাত্রাকে তাঁর সিনিয়র কোড নেম দেন 'শেরশাহ'। 


২০ জুন ক্যাপ্টেন বাত্রার নেতৃত্বে ৫১৪০ শৃঙ্গের দখল নেয় ভারতীয় সেনা। সামনে থেকে দাঁড়িয়ে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। এমনকী পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে হাতাহাতি লড়াইও হয় তাঁর। এর পর তিনি তাঁর সিনিয়রদের কাছে কোডে মেসেজ পাঠান 'ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর'। অর্থাৎ তিনি বার্তা পাঠাতে চেয়েছিলেন যে, ভারতীয় সেনা ৫১৪০ শৃঙ্গের দখল নিয়েছে। এর পর ক্যাপ্টেন বাত্রাকে পয়েন্ট ৪৮৭৫-এ ভারতীয় পতাকা উত্তোলনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৭ জুলাই ৪৮৭৫ পয়েন্টের উদ্দেশে অভিযান শুরু করেন ক্যাপ্টেন বাত্রা ও তাঁর দল। এই পয়েন্ট রয়েছে মুশকো উপত্যকায়।


এই ৪৮৭৫ পয়েন্ট রয়েছে ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায়। এই শৃঙ্গের দখল অভিযান খুবই বিপজ্জনক ছিল। কারণ, উপর থেকে মেশিন গান নিয়ে ক্যাপ্টেন বাত্রা ও তাঁর দলকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল পাকিস্তানি সেনারা। ক্যাপ্টেন বাত্রার দলের একজনের পায়ে গুলি লাগে। সেইসময় দলকে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন ক্যাপ্টেন। তখন তাঁরই উপর হামলা হয়। বুলেট থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নেন ক্যাপ্টেন বাত্রা। যদিও একটি রকেট-প্রপেলড গ্রেনেডের স্প্লিন্টার এসে তাঁর মাথায় আঘাত করে। সেখানেই শহিদ হন ক্যাপ্টেট বাত্রা।


ভারতীয় সেনার দীর্ঘ লড়াইয়ে জয় আসে কার্গিল যুদ্ধে। এর পর ক্যাপ্টেন বিক্রমকে মরণোত্তর পরমবীর চক্র সম্মানে সম্মানিত করা হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কেআর নারায়ণন ১৯৯৯-এর ১৫ অগাস্ট তাঁকে এই সম্মানে সম্মানিত করেন। এহেন বীর জওয়ানকে শ্রদ্ধার্ঘ্য।