নয়াদিল্লি: ফার্স্ট বেঞ্চে বসার অর্থ ‘ভাল’। আর লাস্ট বেঞ্চ মানেই ‘বখে যাওয়া’। অলিখিত এই নীতি কবে মনে জায়গা করে নিল, উত্তর নেই কারও কাছেই। কিন্তু এই ধারণাই শিক্ষাপ্রাঙ্গনে বিভাজন ও বৈষম্যের বীজ বপন করেছে, যা প্রভাব ফেলে শিশুমনেও। গতবছর মুক্তিপ্রাপ্ত মলয়ালি ছবি ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’ এই সংবেদনশীল বিষয়টিই পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিল। আর তাতেই কেরলের বিভিন্ন স্কুলে বড় ধরনের পরিবর্তন চোখে পড়ছে। সেখানকার শ্রেণিকক্ষে ‘ফার্স্ট বেঞ্চার’, ‘লাস্ট বেঞ্চার’-এর চিরাচরিত ধারণায় ইতি টানা হচ্ছে। নতুন করে সাজানো হচ্ছে শ্রেণিকক্ষকে, যেখানে বসার আসনের নিরিখে কেউ কারও থেকে এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকবে না। (Sthanarthi Sreekuttan)
‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’ ছবির শেষ দৃশ্যটি এখনও অনেকের মনে গেঁথে রয়েছে, যেখানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সারির পরিবর্তে ছাত্রছাত্রীদের বেঞ্চগুলি U-এর আকারে সাজানো ছিল। মাঝে দাঁড়িয়ে পড়াচ্ছিলেন শিক্ষক। ওই ছবি, বলা ভাল, ছবির শেষ দৃশ্যটি শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে কার্যত নতুন বিপ্লবের সূচনা করেছে। কেরলের স্কুলগুলিতে এখন সেভাবেই বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের, যাতে কেউ নিজেকে কারণ চেয়ে এগিয়ে বা পিছিয়ে মনে করতে না পারে। আর এই রদবদলের জন্য ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’ ছবিটিকেই কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে। OTT প্ল্যাটফর্মে ছবিটির চাহিদাও বেড়ে গিয়েছে একধাক্কায়। (Last Bencher Concept)
কেরলের বেশ কিছু স্কুল ইতিমধ্যেই পড়ুয়াদের বসার ব্যবস্থা নতুন করে সাজাতে শুরু করেছে। দক্ষিণের ভালাকোমের রামবিলাসম হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে অর্ধবৃত্তাকারে বেঞ্চ সাজানো হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, এতে প্রত্যেক পড়ুয়াই নিজেকে ‘ফার্স্ট বেঞ্চার’ মনে করতে পারবে। প্রত্যেকেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে সমান গুরুত্ব পাবে। কেরলের অন্তত আটটি স্কুলে এখনও পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে বসার ব্যবস্থা পাল্টে ফেলা হয়েছে। এমনকি এই নীতি গ্রহণ করেছে পঞ্জাবের একটি স্কুলও। ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’ ছবির পরিচালক বিনেশ বিশ্বনাথ জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্যাগ করা হয়েছিল তাঁকে। সেই থেকেই বিষয়টি জানতে পারেন।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিনেশ বলেন, “পঞ্জাবের একটি স্কুলেও এই নিয়ম চালু হয়েছে বলে মেসেজ পেয়েছি। স্কুলের অধ্যক্ষ OTT প্ল্যাটফর্মে আমাদের ছবি দেখে এমন সিদ্ধান্ত নেন। স্কুলে ছবিটি দেখানোও হয়েছে। গোটা দেশ থেকে সাড়া পেয়ে আনন্দ হচ্ছে। ছবির একটি দৃশ্যেই ওভাবে বেঞ্চ সাজানো ছিল। ভাবিনি এভাবে সাড়া পাব। তবে এই ভাবনা আমাদের নয়। প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আগে কিন্তু ওভাবেই বসার ব্যবস্থা ছিল আমাদের।”
প্রায় তিন দশক আগেই এই ভাবনা মাথায় এসেছিল। ১৯৯৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কেরল-সহ ছয় রাজ্যে জো প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প কর্মসূচি চালানো হয়, যার আওতায়, নতুন ভাবে পড়ুয়াদের বসার ব্যবস্থাপনা করতে বলা হয়। সেই সময় অনেক স্কুলই বিষয়টি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু অধিকাংশ স্কুল চিরাচরিত প্রথাই বজায় রেখেছিল। কিন্তু ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’-র দৌলতে ফের পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে।
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI