পার্থপ্রতিম ঘোষ, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও শিবাশিস মৌলিক: কেরলেের ওয়েনাডে ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ৪০০ ছুঁইছুঁই। এখনও নিখোঁজ ২০০-র বেশি মানুষ। গ্রামের পর গ্রাম ধসে গিয়েছে। চারিদিকে ক্ষতের চিহ্ন। সেই আবহে সেনা থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারকার্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ছুটে গিয়েছেন রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা থেকে তৃণমূল সাংসদরাও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কোথায় গেলেন, প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। অন্তত হেলিকপ্টারে চেপে একটা ছবি তুলতে পারতেন বলে কটাক্ষ করছেন। (Wayanad Landslide)
কেরলে ভূমিধসের ফলে যে ভয়াবহতা নেমে এসেছে, তাকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবি তুলেছেন তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে সেই নিয়ে টুঁ শব্দটি শোনা যায়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। আর সেই নিয়েই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীরা। সেই নিয়ে বিরোধীদের পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপি-ও। (Kerala Wayanad Landslide)
কেরলে ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। মাটি খুঁড়ে রোজই দেহ উদ্ধার হয়ে চলেছে। কেন এমন বিপর্যয় নেমে এল কেরলে? কার গাফিলতির জন্য জীবন দিয়ে মাশুল গুনলেন সাড়ে এত সংখ্যক মানুষ? প্রশ্ন উঠছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করছেন বিরোধীরা। বিশেষ করে ওয়েনাডে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
এ নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুস্মিতা দেব। তাঁর কথায়, "এত ভয়ঙ্কর বিপর্যয় হয়েছে। অন্তত আকাশপথে এলাকা ঘুরে দেখা উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর। নিরাপত্তার কারণে হয়ত নামতে পারতেন না, কিন্তু হেলিকপ্টারে চেপে এসে দেখা উচিত ছিল। এই সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল ওঁর।" সুস্মিতার সঙ্গে ওয়েনাডে গিয়ে তৃণমূলের আর এক সাংসদ সাকেত গোখেল বলেন, "বাজেট অধিবেশনের সময় এই বিপর্যয় হয়েছে। ত্রাণের জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সদুত্তর নেই। প্রধানমন্ত্রী কোথায় গেলেন?"
তারুর বলেন, "২০১৮ সালে কেরলে যে বিপর্যয় হয়েছিল, তা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি ছিল এতদিন। কিন্তু এবারের ক্ষয়ক্ষতি তাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। আমি জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করতে আবেদন জানিয়েছিলাম। এতে দেশের সব সাংসদ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত দিতে পারতেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও জবাব পাইনি। এলাকার সাংসদ নিজের টাকা দিয়ে কাজ করতে পারেন। কিন্তু এই মুহূর্তে ওয়েনাডে কোনও সাংসদ নেই।"
সমালোচনার পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে বিজেপি-র রাজ্যসভা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "তৃণমূলের যে দু'জন গিয়েছেন, তাঁরা যে হাউজের সদস্য...সকলেই জানেন, ঘটনার পর পরই মন্ত্রী জর্জ কুরিয়েনকে পাঠিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আসলে তৃণমূলের সবকিছুই ঘোষণা সর্বস্ব, সেখানে দিয়েও নাটক করছে।"
কিন্তু কেরল নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও। তাঁর কথায়, "ওয়েনাডে ভয়াবহ বিপর্যয় হয়েছে। বেশি করে নজর দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমন কিছুই চোখে পড়ছে না।" কেরলের পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতেও টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। অমিত শাহের দাবি, বিপর্যয়ের আগেই কেরলের পিনারাই বিজয়ন সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল। যদিও পিনারাইয়ের দাবি, বিপর্যয়ের পর সতর্কবার্তা আসে। সেই আবহে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।