অর্ণব মুখোপাধ্যায়, আশাবুল হোসেন ও দীপক ঘোষ: রবীন্দ্র জয়ন্তীতে রাজ্য় সফরে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। তাঁকে আক্রমণ করতে গিয়ে, দু হাজার উনিশ সালে বিদ্য়াসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গ সামনে আনল তৃণমূল (TMC)। পাল্টা আক্রমণের পথে হেঁটেছে গেরুয়া শিবিরও (BJP)।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) চেয়ে ৪১ বছরের বড় ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (Ishwar Chandra Vidyasagar)। বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’- দিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাষা শিক্ষার শুরু। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'বঙ্গসাহিত্যে আমার কৃতিত্ব দেশের লোক যদি স্বীকার করে থাকেন, তবে আমি যেন স্বীকার করি, একদা তার দ্বার উদ্ঘাটন করেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর'।
মঙ্গলবার রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে সেই বিদ্য়াসাগরের প্রসঙ্গ উঠে এল রাজনীতিবিদদের মুখে। কিন্তু সেই প্রসঙ্গ মোটেই সুখকর নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গেল, "বিদ্যাসাগরের মূর্তিও ভেঙে ফেলা যায়। আবার নির্বাচনের নামে না জেনে, টিপি-তে লিখে নিয়ে এসে অনেক বড়বড় কথা বলা যায়। কিন্তু আমি জানি, হৃদয়কে মুক্ত রাখুন।"
আরও পড়ুন: Rabindra Jayanti: ‘রাজনৈতিক’ সফর শাহের, রবীন্দ্র জয়ন্ততীতেও অব্যাহত রইল টানাপোড়েন
১লা বৈশাখের পর, ২৫শে বৈশাখ। বাঙালি অস্মিতাকে ছুঁতে ফের বঙ্গে এসেছেন শাহ। বিগত ছ'মাসে এই নিয়ে তিন বার রাজ্যে এলেন তিনি। ২০১৯-এ কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছিল। রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল কলেজ স্ট্রিট চত্বর। এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, তা নিয়ে তরজা সপ্তমে ওঠে। পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে তৃণমূল এবং বিজেপি। পরে জুন মাসে, বিদ্যাসাগর কলেজের ভিতরেই নতুন বিদ্যাসাগরের মূর্তি বসানো হয়।
মঙ্গলবার জন্মজয়ন্তীতে যখন রবি-স্মরণে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে মাল্যদান করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ, সেই প্রেক্ষাপটেই বিদ্য়াসাগরের মূর্তি ভাঙার সেই পুরনো ঘটনার কথা মনে করিয়ে খোঁচা দিয়েছেন তৃণমূলের মন্ত্রীরা। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে বলতে শোনা যায়, "রবীন্দ্রনাথকে প্রণাম করতে গেলে, বিদ্যাসাগরকেও জানতে হবে। তার মূর্তি ভেঙেছিল।"
আরও পড়ুন: Skin Care Tips: মুখের ত্বকে ভুল করেও ব্যবহার করবেন না এইসব উপকরণ
বিদ্য়াসাগরের মূর্তি ভাঙার সেই ঘটনায় চার্জশিট পেশ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও কেউ দোষী সাব্য়স্ত হয়নি। বিদ্য়াসাগর প্রসঙ্গে একদা কবিগুরু লিখেছিলেন, 'বিদ্যাসাগরের জীবনবৃত্তান্ত আলোচনা করিয়া দেখিলে এই কথাটি বারংবার মনে উদয় হয় যে, তিনি যে বাঙালি বড়ালোক ছিলেন তাহা নহে, তিনি রীতিমত হিন্দু ছিলেন তাহাও নহে- তিনি তাহা অপেক্ষাও অনেক বেশি বড় ছিলেন, তিনি যথার্থ মানুষ ছিলেন। বিদ্যাসাগরের জীবনীতে এই অনন্য সুলভ মনুষ্যত্বের প্রাচুর্যই সর্বোচ্চ গৌরবের বিষয়'। কিন্তু রবীন্দ্র জয়ন্তীতে বার বার যখন বিদ্যাসাগরের প্রসঙ্গ উঠে এল, তা শ্রুতিমধুর হল না।