কলকাতা: আবার ঘরের মাঠ ভবানীপুরেই ফিরছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরনো কেন্দ্র থেকেই উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চলেছেন তিনি। শুক্রবার বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন ভবানীপুরের বর্তমান বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। 


বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম থেকে লড়ার ঘোষণা করার সময়ও তাঁর মুখে উঠে এসেছিল পুরনো কেন্দ্র ভবানীপুরের কথা। বলেছিলেন, ভবানীপুর বড় বোন, নন্দীগ্রাম ছোট বোন। 


২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের সেরা আকর্ষণ ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের এই কেন্দ্র। কোনও রাজনীতি-নির্ভর সিনেমা স্ক্রিপ্টের থেকে কম চিত্তাকর্ষক নয়। যার উপর নজর ছিল গোটা দেশের। সৌজন্যে - মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী।


মেদিনীপুরের সভায় অমিত শাহর হাত থেকে বিজেপির পতাকা তুলে নেন শুভেন্দু। দলের একসময়ের সেনাপতির দলবদল হজম করতে পারেননি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।


বরাবরের লড়াকু রাজনীতিক মমতা আর পিছিয়ে আসতে চাননি। কার্যত মমতা-শুভেন্দুর সরাসরি লড়াইয়ের আবহ তৈরি হয়ে যায়। তাতে সিলমোহর দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ১৮ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে তেখালি মাঠের সভা থেকে নন্দীগ্রামের আসনে লড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন মমতা। 


১০ মার্চ নন্দীগ্রামে নিজের মনোনয়নপত্র জমা দেন মমতা। ঘটনাক্রমে সেদিন সন্ধ্যায় পায়ে চোট পান মমতা। অভিযোগ করেন, চার-পাঁচজন তাঁকে আক্রমণ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। এসএসকেএমে ভর্তি হন তিনি। 


এই ঘটনায় তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূল সুপ্রিমো জানান, পরিকল্পনা করে তাঁকে হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছে। বিজেপি পাল্টা তৃণমূলের দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সিবিআই তদন্তের দাবি তোলে। 


পরে কমিশনের পর্যবেক্ষক টিম তাদের রিপোর্টে জানায় যে, ঘটনাটি কোনওভাবেই পরিকল্পিত নয়। যদিও, গাফিলতির জেরে মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসারকে সরিয়ে দেয় কমিশন। 


হাসপাতালে তিনদিন কাটানোর পর হুইলচেয়ারে ,বেরিয়ে আসেন মমতা। এক সপ্তাহ পর, নির্বাচনী প্রচারপর্ব গোটাটাই হুইলচেয়ারে বসেই করেন তৃণমূলনেত্রী। এই ঘটনা নির্বাচন-পর্বের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায়। 


ভোটের ফল হতে দেখা যায়, দুশোর বেশি আসন দখল করে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতা দখল করছে তৃণমূল। কিন্তু, ব্যাটলগ্রাউন্ড নন্দীগ্রামে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয় মমতাকে। 


নন্দীগ্রামে পরাজয়ের পর, নিয়ম অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার, ৬ মাসের মধ্যে কোনও কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই মতোই তিনি এবার লড়বেন পুরনো কেন্দ্র ভবানীপুর থেকে। 


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেড়ে যাওয়া বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে এবার তৃণমূলের হয়ে লড়াই করেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। 
বিজেপির তারকা প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষকে ২৮ হাজার ৭১৯ ভোটে হারিয়ে জয়ী হন তিনি। 


সদ্যগঠিত মন্ত্রিসভায় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে কৃষিমন্ত্রী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শপথ নেওয়ার দু’সপ্তাহের মাথায় বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শোভনদেব। 


এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। রেলমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। 


২০১১-তে ভবানীপুর থেকে ৪৯ হাজার ৯৩৬ ভোটে জিতে বিধায়ক হন সুব্রত বক্সী। পরে তিনি ভবানীপুর আসনটি ছেড়ে  দেন। উপনির্বাচনে সেই আসন থেকে ৫৪ হাজার ২১৩ ভোটে জিতে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।