কলকাতা: জেল থেকে মুক্তি পেলেও আপাতত গৃহবন্দি। বাড়ি থেকে ভার্চুয়ালি করা যাবে প্রশাসনিক কাজকর্ম। সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়-- এই ৪ হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীর মামলার শুনানিতে শুক্রবার এই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।


এদিন সন্ধ্যায় মামলার শুনানিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করল হাইকোর্ট। সোমবার সকাল ১১টায় হাইকোর্টে বৃহত্তর বেঞ্চের শুনানি হবে। 


বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি না হওয়ার পর শুক্রবার, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি শুরু হয়।


৪ হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীর তরফে আবেদন জানানো ছিল, বিশেষ সিবিআই আদালত তাঁদের জামিন দেওয়ার পর, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ, তারওপর যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল, সেই সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করা হোক। অন্যদিকে সিবিআই-এর আবেদন ছিল, এই মামলা অন্যত্র সরানো হোক।


শুক্রবার শুনানির শুরু হওয়ার পরই  বিচারপতি অরিজিত্‍ বন্দ্যোপাধ্যায়, ৪ জন নেতা-মন্ত্রীর অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু, বিরোধিতা করে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল জানান, তিনি এখনই জামিন দেওয়ার বিরুদ্ধে। 


দুই বিচারপতির মধ্যে এই মতভেদের জেরে আদালত সিদ্ধান্ত নেয়, অন্য কোনও বেঞ্চে এ নিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত,  জেল হেফাজতে থাকতে হবে না সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। তাঁরা আপাতত হাউজ অ্যারেস্ট বা গৃহবন্দি থাকবেন। 


এরপরই ৪ নেতা-মন্ত্রীর আইনজীবীর তরফে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ফিরহাদ হাকিম পুরসভায় যেতে না পারলে, করোনার বিরুদ্ধে কী করে লড়বেন? তিনি সই না করলে অনেক কাজ আটকে যাবে। তাই গৃহবন্দি নয়, অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হোক। 


তিনি আবেদন জানান, সম্ভব হলে এদিনই গঠন করা হোক নতুন বেঞ্চ।  ৪ নেতা-মন্ত্রীর পক্ষে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর্জি জানান, প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে শনি-রবিবারই শুনানি করা হোক।


পাল্টা বিরোধিতা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। তিনি বলেন, গৃহবন্দি থেকেও বাড়ি থেকে কাজ করা যেতে পারে। তাতে কোনও বাধা থাকবে না। 


এরপরই প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, যে নেতা-মন্ত্রীরা সরাসরি প্রশাসনিক কাজে যুক্ত, তাঁরা গৃহবন্দি থাকলেও, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম ও মিটিং করতে পারবেন। সমস্ত ধরনের চিকিৎ‍সার ব্যবস্থা করা হবে।  কিন্তু, চারজনের কেউই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে, কোনও মিটিং বা প্রশাসনিক কাজ করতে পারবেন না। সিবিআইকে তদন্তে সবরকমের সাহায্য করতে হবে। 


পাশাপাশি, গৃহবন্দি নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষকে একগুচ্ছ নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। বলা হয়, গৃহবন্দি অবস্থায় ভিডিও কনফারেন্সের রেকর্ড রাখতে হবে। ভার্চুয়ালি কার সঙ্গে, কী কথা, রাখতে হবে রেকর্ড। গৃহবন্দি অবস্থায় বাড়িতে কে আসছেন, তাও রাখতে হবে রেকর্ড। সিসিটিভি না থাকলে, তা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এমনকী, বাড়ির বাইরে সিসি ক্যামেরা না থাকলে বসানোর নির্দেশও দেওয়া হয়। 


এদিকে, শুক্রবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ঐকমত্যের ভিত্তিতে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না পারায়, এবার হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চে ৪ হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীর এই মামলার শুনানি হবে। 


সন্ধ্যায় ৫ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করল হাইকোর্ট। বৃহত্তর বেঞ্চে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল। এছাড়া বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ টন্ডন, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি সৌমেন সেন। সোমবার সকাল ১১টায় হাইকোর্টে বৃহত্তর বেঞ্চের শুনানি হবে। 


অন্য শুনানিতে মামলা অন্যত্র সরানোর জন্য সিবিআই যে আবেদন করেছিল, তা নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এদিন জানায়নি কলকাতা হাইকোর্ট।