উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : সিপিএমের শাখা স্তর থেকে কেন্দ্রীয় স্তর পর্যন্ত সম্মেলন শুরু হচ্ছে। পরের বছর এপ্রিলে পার্টি কংগ্রেস। তার আগে রাজ্য কমিটির তরফে জারি করা হল একগুচ্ছ নির্দেশিকা। সেই গাইডলাইনে নেতৃত্বে তরুণ প্রজন্মকে তুলে আনা থেকে শুরু করে, দলে মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং লাগাতার শুদ্ধিকরণে জোর দেওয়া হয়েছে।
সবস্তরে নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব দিতে হবে। বেশি করে যুক্ত করতে হবে ছাত্র, যুব, মহিলাদের। আসন্ন সম্মেলন ও পার্টি কংগ্রেসের আগে সিপিএমের রাজ্য কমিটির তরফে জারি করা হল এমনই নির্দেশিকা।
রাজ্যে ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার। অথচ এবার বিধানসভা ভোটে বাংলা থেকে তারাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। আর এই ভরাডুবিকে ঘিরেই সরগরম হতে চলেছে সিপিএমের আসন্ন সম্মেলন।
সিপিএম সূত্রে খবর, পুজোর আগেই দলের শাখাস্তরের সম্মেলন শেষ হয়ে যাবে। তার পরে জোনাল কমিটি, এরিয়া কমিটি, জেলা কমিটি এবং রাজ্য কমিটির সম্মেলন হবে। পরের বছর এপ্রিলে কেরলের কান্নুরে পার্টি কংগ্রেস।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, তার আগে এই সম্মেলন সিপিএমের কাছে কার্যত ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা, এই দুই রাজ্যে তো বটেই।
এবার বিধানসভা ভোটে দল কেন একটাও আসন পেল না, আসন্ন সম্মেলনে তার পর্যালোচনায় জোর দেওয়া হয়েছে। অতীতে সিপিএমের বেশ কয়েকজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দল বদল করেছেন। নানা ক্ষেত্রে প্রগতিশীল ভূমিকার কথা বলে আসা সিপিএমে, পলিটব্যুরোয় এখনও পর্যন্ত মহিলা সদস্য বলতে একজন। সিপিএম সূত্রে খবর, এই সমস্ত দিক চিহ্নিত করে দলের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্মেলন ও পার্টি কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে জারি হয়েছে গাইডলাইন।
তাতে ধারাবাহিক শুদ্ধকরণে জোর দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এটাও বলা হয়েছে, নেতৃত্বের কাজকর্ম নিয়ে কঠোর সমালোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু তার মধ্যে যেন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া না থাকে। কেরল সিপিএমের গাইডলাইনে বরাবরই গুরুত্ব পেয়ে এসেছেন নবীনরা। সিপিএম সূত্রে খবর, এরাজ্যে দল কেরল লাইনে এগোবে কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র বলেন, সিপিএম যা করছে সাংগঠনিক ভাবে তা সত্যি ভাল কাজ। কিন্তু এতে ভোট বাড়বে এমনটা বলা যাবে না। ভোট হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া। বড় নেতারা যতদিন পর্যন্ত জনগণের দোরগোড়ায় না পৌঁছবেন ততদিন ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ইমন কল্যাণ লাহিড়ি বলেন, সিপিএম একটি সাংগঠনিক দল। সিপিএমকে ঘুরে দাঁড়াতে গেলে শুধু সংগঠনের ওপর নির্ভর করলে হবে না। কেন মানুষ সিপিএমকে গ্রহণ করছে না, তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। আজকের দিনে এক্সপার্ট যারা আছে, তাদের দিয়েই এই কাজ করাতে হবে। না হলে আসল ত্রুটি কোথায় তা চিহ্নিত করা যাবে না।
বৃদ্ধতন্ত্রের সমালোচনায় জেরবার সিপিএমে নবীনের প্রতিষ্ঠা কি সময়ের অপেক্ষা ? সময়ের গর্ভেই লুকিয়ে তার উত্তর।