সোমনাথ মিত্র, হুগলি: দক্ষিণা কালী এখানে নীল বর্ণা, একহাতে খর্গ,আরেক হাতে বাঁশি। বিগ্ৰহকে প্রত্যহ নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়। সিঙ্গুরের নান্দা সন্ন্যাসীঘাটা ব্রহ্মময়ী মা এখানে কৃষ্ণকালী রূপে বিরাজমান।

Continues below advertisement

আরও পড়ুন, রায়দিঘিতে পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে শুভেন্দু, '..আমার গাড়িতে ধাক্কা মেরেছে ' !

Continues below advertisement

ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের ভাব উপলদ্ধি ছিল "যেই কালী সেই কৃষ্ণ"। সেই কথাই এখানে ধরা দিয়েছে মায়ের বিগ্ৰহে। মা এক হাতে যেমন দুষ্টের দমন এর বার্তা দিয়েছেন, তেমনি অপর হাতে, বাঁশির মাধ্যমে প্রেমের বার্তাও দিয়েছেন।১০০ বছরের বেশী পুরনো সিঙ্গুরের  নান্দা সন্ন্যাসী ঘাটা ব্রহ্মময়ী মা এই ভাবেই বিরাজ করছেন । প্রত্যহ মাকে অপরাহ্ণে ভাত শাক ডাল সবজী তরকারী ভোগ দেয়া হয়। ভোগ শেষে মন্দির বন্ধ হয়ে যাবার পর আবার গর্ভগৃহের দরজা খোলা হয় বিকাল ৫টার সময়।নিষ্ঠাভরে পুজো অর্চনা করা হয় প্রত্যেক দিন। দীপান্বিতা কালীপুজোয় মায়ের বিশেষ পুজো অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়। 

সকালবেলা ঘটের জল পাল্টে মাকে নতুনরূপে সাজিয়ে তোলা হয়। অমবস্যা তিথিতে তন্ত্র মতে সারারাত মায়ের পুজো হলেও এখানে কোন বলিপ্রথা নেই। কালী পুজোর দিন মন্দিরে উপচে পড়ে ভক্তের ভিড়। মন্দিরের গর্ভগৃহে মায়ের মূর্তির পাশাপাশি রাধাকৃষ্ণ, জগন্নাথ দেব ও অধিষ্ঠিত। কালীর পাশাপাশি পুজিত হন এই সমস্ত দেবতাও। তাছাড়া রাস উৎসব, জগন্নাথ এর রথযাত্রা, শিবরাত্রী  , দোল উৎসব উৎযাপিত হয় ব্রক্ষ্মময়ী মায়ের মন্দির চত্বর এলাকায়। জাগ্ৰত মায়ের মহিমায়  দূর দূরান্ত থেকে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয় সারা বছর ধরেই।

সিঙ্গুরের নান্দা সন্ন্যাসীঘাটা এলাকায় ব্রহ্মময়ী মা এর মন্দিরের পিছন দিয়ে প্রবাহিত ইতিহাস প্রসৃদ্ধ সরস্বতী নদী। প্রায় ১০০ বছর আগেরকার কথা। কথিত আছে , এলাকার এক চিকিৎসক যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নিয়মিত এই পথ দিয়ে যাতায়াত করতেন।  একদিন মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে সরস্বতী নদীর তীরে অবস্থিত জঙ্গল ঘেরা শশ্মানে ধ্যানমগ্ন হন। এবং মৌন ব্রত গ্ৰহন করেন। সাধনার ১২বছর পর মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই কালী মূর্তি প্রতিষ্টা করে পুজো অর্চনা শুরু করেন।

স্থানীয়দের দাবি, তিনি হয়তো স্বপ্নে মায়ের এই রূপ দর্শন পেয়েছিলেন বা কোন ভাব উপলদ্ধি করেছিলেন তাই এই কৃষ্ণ কালী মূর্তি প্রতিষ্টা করেন। তারপর থেকে সেই একই মূর্তিতে আজ অবধি মায়ের আরাধনা হয়ে আসছে। তখন টালির চাল দিয়ে তৈরী কুঠিরে মায়ের আরাধনা হত। কালক্রমে  মায়ের মন্দির জীর্ন হয়ে পড়ায় স্থানীয়রা উদ্দ্যোগ নিয়ে মায়ের নতুন মন্দির তৈরী করেন। কিন্তু মায়ের বিগ্ৰহের কোন পরিবর্তন করা হয় নি। মন্দিরের একদম পিছনেই সেই কালী সাধকের সমাধি অবস্থিত। এবং তার পিছন দিয়ে এখনো প্রবাহিত সরস্বতী নদী। যদিও নদী তার আগের গৌরব হারিয়েছে। 

 মন্দির কর্তৃপক্ষের পদাধিকারী অমর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মানুষের মধ্যে শান্তি বিরাজের জন্যই আমাদের মৌনি বাবা এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই তার মানস লোকে দেখা মূর্তি অনুযায়ী এই মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে জগতে শান্তি বিরাজের জন্য। কারন, যেই কালি সেই কৃষ্ণ। কালী পুজোর দিন খুব শান্ত পরিবেশে এখানে পুজো অর্চনা হয়। মন্দিরের পুরোহীত সনাতন চক্রবর্তী বলেন,এই মায়ের মাহাত্ম্য অনেক। এই মা জ্যান্ত। কেউ মন দিয়ে ডাকলে উপকার পাবে ই। আমি স্বপ্নে মাকে দেখেছি। মায়ের এখানে রোজ পরমান্ন দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।  ভাত ডাল সবজি মাকে নিবেদন করা হয়। তাছাড়া প্রত্যেক সোমবার এই মন্দিরে মায়ের ও বাবা ভাণ্ডারা চলে।