কলকাতা: বেহালায় মা-ছেলের খুনের ঘটনায় ধৃতদের কঠোর শাস্তি চাইছে পরিবার। টাকার জন্য আত্মীয়দের হাতে খুন হয়েছেন মা ও ছেলে, এখনও তা বিশ্বাসই করতে পারছেন না মৃত সুস্মিতা মণ্ডলের বাবা ও স্বামী। মৃতার বাবার দাবি, ছোট থেকে মাসতুতো ভাইদের সঙ্গে বড় হয়েছেন সুস্মিতা। মাসকয়েক আগে নিজের মাসিকে টাকাও ধার দেন। এরপরও খুনের ঘটনা ঘটায় অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মৃতার বাবা ও স্বামী।


গতকালই পর্ণশ্রীতে ‍মা-ছেলেকে খুনের ঘটনায়, মৃতার দুই মাসতুতো ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রচুর দেনা থাকায় টাকা-সোনা লুঠের পরিকল্পনা ছিল। তা না পেয়েই খুন করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। 


সত্যি হয়েছিল পুলিশের আশঙ্কা।  বেহালার পর্ণশ্রীতে মা-ছেলের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পিছনে হাত সেই পরিচিতদেরই। জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয় নিহত গৃহবধূর দুই মাসতুতো ভাই। রবিবার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বজবজের বাসিন্দা সঞ্জয় দাস এবং তাঁর ভাই মহেশতলার বাসিন্দা সন্দীপকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। 


গতকাল সাংবাদিক বৈঠকে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মুরলীধর শর্মা জানান, কাল রাতে বাড়ি থেকে সঞ্জয়কে আনা হয়। গোটা রাত জেরা। দোষ স্বীকার করতেই গ্রেফতার। আর ছোট ভাই বিকেল চারটে নাগাদ গ্রেফতার, ইন্ডিয়ান এক্সচেঞ্জ বিল্ডিং থেকে।


গত ৬ তারিখ, সোমবার পর্ণশ্রী থানার সেনপল্লির এই ফ্ল্যাটের দুটি ঘর থেকে উদ্ধার হয় সুস্মিতা মণ্ডল ও তাঁর ছেলে তমোজিতের রক্তাক্ত মৃতদেহ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আই হোল দিয়ে না দেখে দরজা খুলতেন না গৃহবধূ। তাই প্রথম থেকেই তদন্তকারীর এক রকম নিশ্চিত ছিলেন, হত্যাকাণ্ডের পিছনে হাত রয়েছে কোনও পরিচিতর। এরপরই নিহতের স্বামী ও কয়েক জন নিকটাত্মীয়কে দফায় দফায় জেরা করেন তদন্তকারীরা। ধৃত সঞ্জয় ধর্মতলার একটি শপিং মলের সিসি ক্যামেরার অপারেটর। ভাই সন্দীপ এক আইনজীবীর গাড়ির চালক। 


পুলিশ মলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, খুনের দিন কাজে যোগ দেননি তিনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সঞ্জয় জানিয়েছিলেন, তাঁর মামি মারা গেছেন। তদন্তকারীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন অভিযুক্তের মামি মারা গেছেন দেড় বছর আগে। তাতেই জোরাল হয় সন্দেহ। টানা জিজ্ঞাসাবাদে অবশেষে অপরাধ স্বীকার করেন সঞ্জয়। জানান খুনের ঘটনায় ভাইয়ের সাহায্য নেন তিনি। 


ঘটনায় নিহতের মোবাইল ফোন, চাবি ছাড়া মূল্যবান কোনও জিনিস খোয়া যায়নি। তাই লুঠের উদ্দেশ্যে খুনের তত্ত্বও খাটছিল না। কিন্তু ধৃতদের জেরার পর পুলিশ নিশ্চিত, মাসতুতো দিদির কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য না পেয়েই, তাঁকে ও তাঁর ছেলে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দুই ভাই। যদিও স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন ধৃত সঞ্জয় দাসের স্ত্রী।