উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: বিএসএফের এক্তিয়ার-বিতর্কে উত্তপ্ত বিধানসভা। দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ-র মন্তব্যে তোলপাড়। বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামীর পা ভাঙার হুমকি উদয়নের। ‘পরীক্ষা করার নামে মহিলাদের উত্যক্ত করে বিএসএফ’, বিধানসভায় উদয়ন গুহের অভিযোগে তোলপাড়। দিনহাটার তৃণমূল বিধায়কের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ বিজেপির।


৫ মিনিট ধরে তৃণমূল-বিজেপি বচসায় উত্তপ্ত বিধানসভা। ‘এই ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে হবে’, গন্ডগোল থামিয়ে কড়া বার্তা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের। 


‘প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, অপেক্ষা করা উচিত। চিঠির জবাব না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। এই ধরনের প্রস্তাব আনার কোনও এক্তিয়ারই নেই রাজ্যের। বিএসএফের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অনুচিত। বিএসএফ দেশ রক্ষা করে, দার্জিলিঙে মুখ্যমন্ত্রীকে বিএসএফই বাঁচিয়েছিল। ৫০ কিমির পরে বদলে এক্তিয়ার বাড়িয়ে ৮০ কিমি করা উচিত’, উদয়নের বিএসএফ-মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।


বিধানসভায় উদয়ন গুহর বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদ বিএসএফের। তল্লাশির নামে মহিলাদের অবাঞ্ছিত স্পর্শের অভিযোগ উদয়নের। ‘বিএসএফ পেশাদার নিরাপত্তাবাহিনী, নিয়ম-নীতি মেনে চলে। একমাত্র বিএসএফের মহিলা রক্ষীরাই মহিলাদের তল্লাশি করেন’, তৃণমূল বিধায়কের অভিযোগ উড়িয়ে দাবি বিএসএফের, খবর এএনআই সূত্রে।


এদিকে, বিএসএফ-এর কর্মক্ষেত্রের পরিধি বাড়ানোর বিরোধিতায়, প্রস্তাব পাস হয়ে গেল রাজ্য বিধানসভায়। সম্প্রতি মোদি সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে যে, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ-এর কর্মক্ষেত্রের পরিধি ৫০ কিলোমিটার করা হচ্ছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব ও অসমে বিএসএফ-এর কর্মক্ষেত্রের পরিধি ১৫ কিলোমিটার থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ কিলোমিটার। অন্যদিকে, গুজরাতে তা ৮০ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৫০ কিলোমিটার।


কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় আজ রাজ্য বিধানসভায় প্রস্তাব আনে তৃণমূল। যা নিয়ে দেড়ঘণ্টার আলোচনায় তৃণমূল ও বিজেপি বিধায়করা উত্তপ্ত বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। যা কার্যত হুমকি অবধি গড়ায়। সীমান্তবর্তী জেলা মালদার ইংরেজবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন, ‘বিএসএফ আরও ভিতরে এলে অসুবিধা কোথায়? আপনারা কি কোনও অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করছেন?’ তখন তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘বিএসএফ-এর কোনও ট্রেনিং নেই। ওদের অত্যাচার সবাই জানে।’


বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর প্রস্তাবের বিপক্ষে বলেন, ‘গাইঘাটার কী অবস্থা সবাই জানে। বিএসএফ না থাকলে গ্রামের কী অবস্থা হত আমরা জানি।’ অন্যদিকে, পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবার প্রস্তাবের পক্ষে বলেন, ‘বিএসএফ-এর সঙ্গে পুলিশের সংঘাত অনিবার্য। শীতলকুচির ঘটনা ভুলে গেলেন?’


দেড় ঘণ্টা উত্তপ্ত আলোচনার পর, ভোটাভুটি হলে সেখানে ১১২-৬৩ ভোটে প্রস্তাব পাস হয়ে যায়। অর্থাৎ বিএসএফ-এর কাজের পরিধি বৃদ্ধির বিরোধিতায় আনা প্রস্তাবের পক্ষে ১১২টি ভোট পড়ে। আর বিপক্ষে পড়ে ৬৩টি ভোট। তবে প্রস্তাব পাসের পরও বিএসএফ ইস্যুতে তৃণমূল-বিজেপির তরজা থামেনি।