কলকাতা: আজ মহালয়া৷ পিতৃপক্ষের অবসান৷ ভোর থেকেই শুরু তর্পণ। আগমনীর গানে অতীতকে স্মরণ করে মায়ের অপেক্ষা ৷  বাবুঘাট থেকে বাগবাজার ঘাটে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তর্পণ ৷ গঙ্গার ঘাটে কড়া নিরাপত্তা। তৎপর কলকাতা পুলিশ ও রিভার ট্রাফিক পুলিশ। শাস্ত্রমতে দেবীপক্ষের আগের কৃষ্ণা প্রতিপদে মর্ত্যধামে নেমে আসেন পিতৃপুরুষরা ৷ অপেক্ষা করেন উত্তরসূরীদের কাছ থেকে জল পাওয়ার৷ মহালয়ার দিন অমাবস্যায় তাঁদের উদ্দেশে জলদানই তর্পণ৷


মহালয়ার মাহেন্দ্রক্ষণে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে কিছু অর্পণই হল তর্পণ...গোটা পিতৃপক্ষজুড়ে তর্পণ করা যায়। তবে পিতৃপক্ষের শেষে অমাবস্যা তিথি, তর্পণের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে ধরা হয়। পৌরাণিক কাহিনিতে কথিত আছে, পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশে জলদান করা হলে, তাঁরা তৎক্ষাণাৎ গ্রহণ করে আর্শীবাদ করেন। এভাবেই পূর্ব পুরুষদের তৃপ্ত করা হয়। পুকুর থেকে নদী। যে কোনও জলাশয়ে তর্পণ করার রীতি আছে। কারা করতে পারবেন তর্পণ? পুরাণবিদ শিবশঙ্কর ভারতীর মতে, নারী পুরুষ জাতি ধর্ম নির্বিশেষ তর্পণ করতে পারেন। 


তবে শ্রী শ্রী চণ্ডিতে মহালয় হচ্ছে পুজো বা উৎসবের আলয়। এখানে আলয় শব্দটির একটি অর্থ হচ্ছে আশ্রয়। চণ্ডিতে তাই 'মহালয়' বলতে 'পিতৃলোককে ' বোঝানো হয়েছে। পিতৃলোককে স্মরণের ক্ষণকেই বলা হয়েছে মহালয়া। এই সন্ধিক্ষণটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পথ ধরে ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। বলা হয়, মহালয়া হয় অমাবস্যা তিথিতে যা উত্তরায়ণের শেষ সময়। এরপরই সূর্যের দক্ষিণায়ণ গতি শুরু হয়। যা শুভ বলে বিবেচিত নয়। কৃষ্ণপক্ষে কালিমার ক্রমশ লয় হতে হতে অমাবস্যা তিথিতে সে লয় পূর্ণতা পায়। তাই একে বলে মহালয়া।



এদিকে, ‘মহালয়া’ শব্দের সন্ধি বিশ্লেষণ করলে যেমন আরেকরকম অর্থ পাওয়া যায়, তেমনই অভিধান থেকে জানা যায়, ‘মহ’ শব্দের দুটি অর্থ রয়েছে। এক, ‘মহ’ বলতে বোঝায় পুজো বা উৎসব। তা থেকে ব্যুৎপত্তি করলে হয়  মহ+আলয় = মহালয় অর্থাৎ পুজো বা উৎসবের আলয় বা আশ্রয়। আবার ‘মহ’ শব্দের আরেক অর্থ 'প্রেত'। অর্থাৎ প্রেতের আলয় (আশ্রয়)।  সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাহাকে মহালয় বলা হয়। সেই মহালয় থেকে মহালয়া।


মহালয়ার সকালে গঙ্গার ঘাটে ঘাটে তর্পণ যেন, অতীতের ভিত্তিকে একবার ছুঁয়ে দেখা। অতীতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে শিকড়ের অভিমুখে ফেরা।