কলকাতা: আজ হচ্ছে না নারদ মামলার শুনানি। অনিবার্য কারণবশত হচ্ছে না শুনানি। ‘অনিবার্য কারণবশত বসছে না কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ’, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। কবে বেঞ্চ বসবে, তা এখনও স্পষ্ট করে জানানো হয়নি বিজ্ঞপ্তিতে। আপাতত ৪ হেভিওয়েটকে থাকতে হবে জেল হেফাজতেই। 


এই প্রেক্ষিতে, নতুন এক সম্ভাবনার কথা সামনে এসেছে। সূত্রের খবর, নতুন ডিভিশন বেঞ্চ গড়ার আবেদন নিয়ে ভাবনা-চিন্তা চালানো হচ্ছে হেভিভিওয়েট নেতাদের তরফে।


সেক্ষেত্রে, ৪ হেভিওয়েট নেতারা এই মর্মে আবেদন করতে পারেন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে। এমন একটা সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে।


নারদ-মামলায় নেতা-মন্ত্রীদের জামিনের স্থগিতাদেশ পুনর্বিবেচনা নিয়ে আজ দুপুর ২টোয় হাইকোর্টে শুনানি হওয়ায় কথা ছিল। পাশাপাশি আজ মামলা স্থানান্তরের শুনানিও হওয়ার কথা ছিল হাইকোর্টে।  


এর আগে, বুধবার আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে শুনানি। সেখানে সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, দেশের ইতিহাসে এরকম কখনও হয়নি।


তার প্রেক্ষিতে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জামিন হবে কি হবে না, সেটা আমরা কেন সিদ্ধান্ত নেব? শুধুমাত্র মানুষের চাপের অভিযোগ ছিল বলে আমরা স্থগিতাদেশ দিয়েছি। 


সলিসিটর জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, চার্জশিট পেশ করা হয়ে গিয়েছে। এই ৪ জনকে আগে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। এঁরা অসহযোগিতা করেছেন, এমন কোনও অভিযোগ আছে? এই করোনাকালে এদের শুধুশুধু জেলে রাখার কি প্রয়োজন আছে?


তখন, সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল বলেন,  অভিযুক্তরা জেলে নেই, তাঁরা হাসপাতালে আছেন। এই আদালত সিবিআইকে নিয়োগ করেছিল। তাদেরকেই কাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যাতে ন্যায্য বিচার না হয় তার চেষ্টা করা হচ্ছে।  


অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বলেন, অভিযুক্তদের না জানিয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে। তখন তাঁদের ন্যায় বিচারের কথা মনে ছিল না? ছলে-বলে-কৌশলে এই ৪ জনকে জেলে ঢোকাতে চাইছে সিবিআই।


এরপর সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, নিজাম প্যালেস ঘেরাও করা হয়েছে, জোর করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঢুকে তাঁকে গ্রেফতারের কথা বলেছেন। নিঃশর্তভাবে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। এটা পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে।


সিবিআই অফিসারদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো হয়েছে। ৪ জনের মেডিক্যাল করানো যায়নি। শারীরিকভাবে বিচারকদের সামনে পেশ করা যায়নি। প্রচুর সংখ্যক দুষ্কৃতী ছিল সিবিআইকে ভয় দেখানোর জন্য। আইনমন্ত্রী নিজে বহু মানুষকে নিয়ে সারাদিন নিম্ন আদালতে উপস্থিত ছিলেন, এতেও বিচারকের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। 


এরপর তিনি বলেন, কেস ডায়েরি পেশ করতে সিবিআইয়ের আইনজীবীদের বাধা দেওয়া হয়েছে। এটা তদন্তকারীদের উপর চাপ তৈরির কৌশল। এঁরা প্রভাবশালী, আগামীদিনে কাউকে গ্রেফতার করা হলে চাপ তৈরি করা হতে পারে। বিচার ব্যবস্থার উপর চাপ তৈরি করছে। এঁদের ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। 


এরপর অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ও বাকি বিধায়করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিবাদ করেছেন। তাঁরা কোনও অশান্তি করেননি। ২০১১ সাল থেকে এঁরা মন্ত্রী, বিধায়ক ও মাটির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।এতো পুরনো মামলায় হঠাৎ করে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে? মানুষ সুবিচার পাচ্ছেন না বলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এটা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। সিবিআই পুরো সত্যি না বলেই মামলা করছে। 


ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে বলেন,  মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান নিয়ে কী বলবেন? আইনমন্ত্রীর আদালতে অবস্থান নিয়ে কী বলবেন?  জবাবে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, পুরোটাই গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ, কাউকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়নি। বিচারব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করা হয়নি। সিবিআই তো রাজ্যের অধীনে নয়। মুখ্যমন্ত্রী যদি রাজ্য পুলিশের দফতরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতেন, তাহলে বিষয়টা অন্যরকম ছিল।


এরপরই সেদিনের মতো শুনানি শেষ হয়।