কলকাতা:
সোমবার সকালে সিবিআই শোভনকে নিজাম প্যালেসে নিয়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যান রত্না চট্টোপাধ্যায়। বললেন, বাড়ির লোক গ্রেফতার হয়েছে, আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।
আবার বান্ধবী বৈশাখীর দাবি, তিনি শোভনের সঙ্গেই নিজাম প্যালেসে আসেন। বললেন, আমাকে আসতে না করা হয়, তবু আমি ওনার সঙ্গে আসি। শুধু তাই নয়। হাইকোর্টের নির্দেশের পর যখন শোভনকে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেও দেখা যায় বৈশাখীকে।
রত্না চট্টোপাধ্যায় এখন শোভনের ছেড়ে যাওয়া কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক। আর শোভনের এখন কোনও রাজনৈতিক পরিচয়ই নেই।
গত দু’বছর ধরে এই চাকাটা আস্তে আস্তে ঘুরেছে। ২০১৬ সালে বিজেপি যখন সাংবাদিক বৈঠক করে নারদ ফুটেজ দেখায়, তখন শোভন চট্টোপাধ্যায় বিধায়ক, রাজ্যের মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র।
নারদকাণ্ডের পরও ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে জিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। রত্না তখন শুধুই শোভনের স্ত্রী।
কিন্তু, তারপর শোভনের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের জল গড়াতে শুরু করে অন্য খাতে। প্রথমে বাড়ি ও স্ত্রী ছাড়েন। তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি এরাজ্যে ভাল ফল করার পরই পদ্মশিবিরে নাম লেখান শোভন ও তাঁর বান্ধবী।
কিন্তু, তারপর থেকে বৈশাখীকে গুরুত্ব না দেওয়া নিয়ে বারবার বিজেপির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান শোভন। এমনকী, সম্প্রতি বিজেপির কলকাতা জোনের পর্যবেক্ষক হওয়ার পরও, বৈশাখীকে ফেলে দলের মিছিলে যাননি শোভন।
পরে কয়েকদিনের জন্য একসঙ্গে প্রচারে নামলেও প্রার্থীতালিকা ঘোষণা হতেই তাল কাটে। বিজেপির প্রার্থীতালিকায় জায়গা না পেতেই, দু’জনে একসঙ্গে ইস্তফা দিয়ে চিঠি পাঠান।
সেখানেও শোভন চট্টোপাধ্যায় লেখেন, কলকাতা জোন বিশেষ করে বেহালায় নেত্রী হিসেবে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তাও কম নয়। কিন্তু সেই অবদানকে এড়িয়ে নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।
অর্থাৎ বর্তমানে শোভন চট্টোপাধ্যায় না তৃণমূলে, না বিজেপিতে। তবে নারদকাণ্ডে গ্রেফতারির পর, তৃণমূল নেতাদের মুখে ধৃত বাকিদের সঙ্গেই, শোভনের নামও শোনা গেছে।
শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিপদের দিনে, তাঁর পাশে কারা থাকলেন, সেটা তো স্পষ্ট। তাহলে কি শোভনের জীবনের জল আবার বইতে পারে অন্য খাতে? সেই উত্তর অবশ্য দেবে ভবিষ্যৎ।