সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: নারদ মামলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের হলফনামা জমা নেওয়া হবে কিনা, সেই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে হল শুনানি। বুধবার এই বিষয়ে রায় দিতে পারে বলে জানিয়েছে আদালত।


এদিন নারদ মামলায় হলফনামা জমা দেওয়ার আবেদনের শুনানির শুরুতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল অ্যাডভোকেট জেনারেলকে প্রশ্ন করেন, 'কেন হলফনামা জমা করতে চায় রাজ্য সরকার? আপনারা তো প্রথম দিন থেকেই মামলায় ছিলেন, তাহলে আগেই কেন হলফনামা জমা করেননি?'


পাল্টা অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, '২৭ মে থেকে রাজ্য সরকার এই মামলার সঙ্গে যুক্ত। ২ জুন, সিবিআই সওয়াল শেষ করেছে। ৭ জুন আমরা হলফনামা জমা দেওয়ার আবেদন জানাই।'


তিনি বলেন, 'আইন অনুযায়ী, হলফনামা জমা দেওয়ার জন্য আমরা ৪ সপ্তাহ সময় পাব। তাই, আমাদের নির্ধারিত সময় এখনও পেরিয়ে যায়নি। ঘটনার সব তথ্য রাজ্য সরকারের কাছে আছে।'


তিনি যোগ করেন, 'আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। নিরাপত্তার বিষয়টিও রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। তাই আমাদের হলফনামা জমা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।'


পাশাপাশি, তিনি এ-ও বলেন, '৪ হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীকে রাজ্য সরকার সাহায্য করছে বলে, সিবিআই যে অভিযোগ তুলেছে, আমরা তার বিরোধিতা করছি। সেই কারণে, আমাদের হলফনামা জমা দেওয়ার আরও বেশি প্রয়োজন।'


নিজের যুক্তির সপক্ষে বেশ কিছু নির্দেশনামা পেশ করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল।  এরপর তাঁর উদ্দেশ্যে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল প্রশ্ন করেন, মনে করুন, ৪ সপ্তাহের মধ্যে শুনানি শেষ হয়ে গেল। সেক্ষেত্রে কি শুনানি শেষ হওয়ার পরও হলফনামা গ্রহণ করতে হবে? 


বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, আপনাদের এই আবেদনের শুনানি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে হবে। হলফনামা নেওয়ার আবেদন আমরা খারিজ করেছিলাম। মামলা সুপ্রিম কোর্টে গেল, সেখান থেকে আবার এখানে ফেরত পাঠানো হল। এ বিষয়ে শুনানি বেশিদিন চলতে পারে না। এতে, সাধারণ মানুষের মধ্যে বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে। 


এরপরই, অ্যাডভোকেট জেনারেল আবেদন করেন, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়, তাই আমাদের হলফনামা নেওয়া হোক।  


রাজ্যের পক্ষ থেকে সওয়াল শেষের পরই, সওয়াল শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী। তিনি বলেন, শুধুমাত্র বিলম্বের কারণে, মামলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিতে অস্বীকার করতে পারে না আদালত।


এটা শুধু একটা স্থানান্তরের মামলা নয়, এর সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। এটা কোনও দেওয়ানি মামলাও নয়, তাই সিবিআই আমাদের হলফনামা জমার বিরোধিতা করতে পারেনা।


এরপরই বিচারপতি হরিশ টন্ডন বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী এই মামলায় অভিযুক্ত নন। মানুষের জমায়েত ও বিক্ষোভের কারণে তাদের এই মামলায় পক্ষ করা হয়েছে। 


রাকেশ দ্বিবেদীর সওয়াল শেষের পর, সওয়াল শুরু করেন সলিসিটর জেনারেল তথা সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা।  তিনি বলেন, ১৭ মে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।  
 
সিবিআইয়ের আইনজীবীর কাছে বিচারপতি সৌমেন সেন জানতে চান,  ঘটনা সম্পর্কে যে তথ্য রাজ্যের কাছে আছে, তারা যদি সেটা আদালতের কাছে হলফনামা আকারে পেশ করতে চায়, সেক্ষেত্রে আপনাদের আপত্তি কোথায়?


বিচারপতি বলেনস, সিবিআই অভিযোগ করেছে বলেই মানুষের জমায়েতের তত্ত্ব মেনে নিতে পারে না আদালত।  উত্তরে সিবিআই আইনজীবী বলেন,  পরিকল্পিতভাবেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হলফনামা জমা দেননি মুখ্যমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী। 


মঙ্গলবার মামলার শুনানি শেষ হয়ে যায়। অ্যাডভোকেট জেনারেল, মুখ্যমন্ত্রী-আইনমন্ত্রীর আইনজীবী ও সলিসিটর জেনারেল, তিনপক্ষই সওয়াল করেছেন। বুধবার হাইকোর্টে এই মামলার রায়দান।