কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও রঞ্জিৎ সাউ, কলকাতা: সুস্মিতা দেবকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ। বুধবারই তিনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। 
সূত্রের খবর, দলের সাংগঠনিক কাজ করতে চান বলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও দেন অর্পিতা। তৃণমূলের পদত্যাগী সাংসদ অর্পিতা বলেন, 'অনেক ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের পর থেকেই মাথায় ঘুরছিল। সংগঠনের কাজ করব। বক্সিদা, ডেরেককে জানিয়েছিলাম। তারপর অভিষেককে চিঠি দিই। দলের অনুমতি পেয়েই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত।


২০২০-র এপ্রিলে অর্পিতা ঘোষকে রাজ্যসভায় পাঠায় তৃণমূল। ২০২৬ অবধি ছিল তাঁর মেয়াদ। তাহলে হঠাৎ কেন পদত্যাগ করলেন অর্পিতা? বিষয়টিকে কেন্দ্র করে জল্পনা ছড়িয়েছে রাজ্য-রাজনীতিতে। অর্পিতা বলেন, '২০২৪-এর ভোট গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যসভার সাংসদ হয়ে থাকলে, দিল্লিতে থাকতে হয়। আমার সাংসদ পদে আর ভালো লাগছে না। পার্টির কাজ এবং থিয়েটার করতে চাই।'


সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের সময় থেকেই নাট্যব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ তৃণমূলের পরিচিত মুখ। ২০১৪ সালে-র লোকসভা ভোটে প্রথমবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বালুরঘাটে বিজেপি প্রার্থীর কাছে তিনি হেরে যান। এরপর অর্পিতা ঘোষকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয় দল।


পরে সাংগঠনিক রদবদলে তাঁর জায়গায় জেলা সভাপতির দায়িত্বে আনা হয় গৌতম দাসকে। ২০২০-র এপ্রিলে রাজ্যসভায় পাঠানো হয় অর্পিতাকে। সেই পদ থেকেই এবার তিনি ইস্তফা দিলেন। অর্পিতার কাজে কি সন্তুষ্ট নয় পার্টি? অর্পিতা বলেন, '২-৪ দিনের মধ্যেই জানতে পারবেন। দায়িত্ব দিলেই বুঝতে পারবেন, সন্তুষ্ট কি না। কাজটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, পার্টির বিশ্বাসযোগ্য কি না, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। লোকসভার পারফরম্যান্সে তো আমি দ্বিতীয় হয়েছিলাম। রাজ্যসভায় পারফরম্যান্স দেখানোর সুযোগই হয়নি।'


এদিকে, অর্পিতা ঘোষ ইস্তফা দেওয়ার পরই, নাম না করে সুস্মিতা দেবের প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি! পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, 'অর্পিতা ঘোষকে তাঁর পার্টি সব কিছু দিয়েছে। এমপি হয়েছেন, জেলা প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, রাজ্যসভায় ছিলেন। এবার নতুন লোককে চান্স দিচ্ছে অন্য রাজ্য থেকে। তাই তাঁকে রিজাইন করতে হল।'


 পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম পাল্টা বলেন, 'অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে অর্পিতা জানিয়েছেন তিনি দলের হয়ে কাজ করতে চান। সেই চিঠি ভাইরাল হয়েছে। এটা দলের ব্যাপার। অন্য দলের এই নিয়ে মন্তব্য করার প্রয়োজন নেই।'


রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছাড়ার পরে, অর্পিতা ঘোষকে, তৃণমূল নেতৃত্ব কী দায়িত্ব দেবে, সেটাই এখন দেখার।