কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও দীপক ঘোষ, কলকাতা: স্কুলে গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশনকে তীব্র ভর্তসনা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির দায় নিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর মধ্যে কার্যত শুরু হয়েছে দায় ঠেলাঠলি।


২০১১ সালে রাজ্যে প্রথমবার তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষামন্ত্রী হন ব্রাত্য বসু। তারপর ব্রাত্য বসুকে সরিয়ে শিক্ষামন্ত্রী করা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। সেই থেকে ২০২১ অবধি টানা শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থই। এ বছর তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষা দফতরে ফিরিয়ে আনা হয় ব্রাত্য বসুকে।


কিন্তু, স্কুলে গ্রুপ ডি নিয়োগে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার দায় কার? তা নিয়ে এখন নাম না করেই পরস্পরের কোর্টে বল ঠেলছেন প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কার্যত দায় ঠেলে দেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর দিকে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘গ্রুপ ডি নিয়োগের ব্যাপারটা শিক্ষা দফতর বলবে।’ অন্যদিকে, ব্রাত্য বসু মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই ঘটনা তাঁর আমলে ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘২০১৬-র বিষয়। এটা তো আমাকে খোঁজ নিতে হবে। আমি তো তখন ছিলাম না। কমিশনকে বলেছি, আদালত যা তথ্য চাইছে দিয়ে দিন। এটা সার্বিকভাবে সংস্থার প্রতি অনাস্থা নয়। এটা নিয়োগ নিয়ে অনাস্থা। আমি তো ছিলাম না, কী করে জানব? নিশ্চয়ই কিছু সমস্যা ছিল, আছে।’


ব্রাত্য বসুর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবার সার্বিকভাবে সরকারের কোর্টে বল ঠেলেছেন। তাঁর দাবি, ‘এটা কোনও ব্যক্তির বিষয় নয়, সরকারের বিষয়। ভুল থাকলে কোর্ট নির্ধারণ করবে। কমিশন তো স্বশাসিত সংস্থা। আমি যখন দফতরে এসেছিলাম, তখন কয়েক হাজার কেস ছিল। সেগুলো ধীরে ধীরে কমেছে। হলে ভুল সংশোধন করা উচিত।’


বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর এই দায় ঠেলাঠেলিকে হাতিয়ার করে সরব হয়েছে বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘ব্রাত্য বলছেন, আমার সময় হয়নি। পার্থ বলছেন, সরকারের বিষয়, আমার নয়। তাহলে দায় কে নেবে? পার্থ না ব্রাত্য? আসলে দায় তাঁরা যাঁর ওপর নির্ভরশীল, মুখ্যমন্ত্রীর দায়।’


অনেকে বলছেন, স্কুলের গ্রুপ ডি পদে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরকারের অস্বস্তি কার্যত স্পষ্ট।