কলকাতা: ঠিক ছিল ভাইফোঁটার (Bhaidooj) আগের দিন রাতেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরবেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)। ছিল আরও অনেক প্ল্যান। কিন্তু কিছুই আর হল না। ভাইফোঁটার আগের দিনেই বোনেদের ছেড়ে চলে গেলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের (Subrata Mukherjee)। কাল মৃত্যু হয়েছে। আজ কেওড়াতলায় সম্পন্ন হল শেষকৃত্য। রবীন্দ্রসদন (Rabindra sadan) থেকে বিধানসভা, আজ দল মত নির্বিশেষে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে শেষশ্রদ্ধা জানান সকলে। কেওড়াতলায় প্রয়াত রাজনীতিবিদকে শেষশ্রদ্ধা জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
অবিভক্ত বর্ধমানের নাদনঘাট থেকে যাত্রা শুরু। অবশেষে সেই পথ চলা শেষ হল চিরবিদায় সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)। যাওয়ার আগে ছুঁয়ে গেলেন প্রিয় সব কিছু। সেই বিধানসভা, বালিগঞ্জের ফ্ল্যাট, একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাব। যার আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের (Subrata Mukherjee) অজস্র স্মৃতি।
বৃহস্পতিবার রাতেই SSKM থেকে প্রয়াত রাজনীতিবিদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পিস ওয়ার্ল্ডে। শুক্রবার সকাল ৯.৪৬। পিস ওয়ার্ল্ড থেকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের (Subrata Mukherjee) মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রবীন্দ্রসদনে। সেখান থেকে কেওড়াতলায় গান স্য়ালুটে শেষ বিদায়।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন (Sister of Subrata Mukherjee) তনিমা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ঠিক ছিল ভাইফোঁটার (Bhaidooj 2021) আগের দিন রাতে দাদা ফিরবে, আমরা কাছে পিঠে তিন বোন আছি। বলেছিলাম এবার যেহেতু ফোঁটা হবে না। শুধু দাদাকে ফোঁটা দিয়ে চলে আসব। বলে আসব পরে খাওয়াব। দাদা পোস্তর বড়া, মাছের টক,পাঁঠার মাংস। দাদা একটু সাবেক খাওয়া ভালবাসত। সবটাই স্মৃতি। প্রতিদিন মানুষটার সঙ্গে যোগাযোগ। সবাই পিতৃহারা হলাম। প্রতিদিন ভালবাসা, বকুনি, শাসন। দাদা ছাড়া কীভাবে থাকব?
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আরেক বোন বুলবুল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, দাদা লক্ষ্মীপুজোর (Laxmi puja 2021) পর আমার হাতে নাড়ু খেতে চেয়েছিল। বলেছিল ভাইফোঁটার দিন খাবে। নাড়ু বানিয়ে রেখেছে এক কৌটো। আজ বিকেলে ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল। কাল ভাইফোঁটা। সেই আফশোস। কাল সাড়ে চারটের সময় কথা হয়েছে। বলল ভাল আছে। বলল যেতে সন্ধে হয়ে যাবে। তুই পরের দিন এসে ফোঁটা দিস। তারপরেই চলে গেলেন।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মাসতুতো ভাই অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, চাকরি সূত্রে সুব্রতদার বাবা কলকাতায় আসেন। রবিবার রক্ষাকালী মায়ের পুষ্পচন্দ নিয়ে এসেছিলাম। এসএসকেএমে আসতে চেয়েছিলাম, বউদি বলল বাড়িতে এসে দেখে যাও। পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরেছেন। তাল খেয়ে গেছেন।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আরেক মাসতুতো ভাই সুশান্ত মুখোপাধ্যায় বলছেন, গত সোমবার এসেছিলাম, বউদি বলল বাড়ি ফিরে যাবে। বাড়িতে এস। বাবা নাদনঘাট স্কুলে প্রথম শিক্ষকতা করতেন। কাঁধে করে নিয়ে গিয়েছিলেন ওনার বাবা। বাবার নামে রাস্তার উদ্বোধন করেন। মণ্ডলগ্রামে মামারবাড়ি। আমাদের শাসন করতেন। বলতেন রাজনৈতিক মিটিং, মিছিল, মঞ্চে না আসতে। দেখা করতে এলে বাড়িতে আসবি।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সহপাঠী শামসুল শেখের কথায়, ক্লাস থ্রি পর্যন্ত একসঙ্গে পড়েছিলাম। উনি জোড়া মন্ডা খেতে খুব ভালবাসতেন। গত বছর এসেছিলেন, জোড়া মন্ডা খাইয়েছিলাম। এই জায়গা পূরণ হবে না।