উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, ঝিলম করঞ্জাই,কলকাতা: করোনা ভ্যাকসিন নিলে শরীরে বাড়ছে অ্যান্টিবডি। প্রথম ডোজের কার্যকারিতা থাকছে ৮ থেকে ৯ মাস। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য। তবে দ্বিতীয় ডোজ কতদিন কার্যকর, তা বলার সময় এখনও আসেনি বলে মত গবেষক ও চিকিৎসকদের একাংশের।
দেশে উৎসবের মরশুম। কিন্তু করোনার দাপট কমছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় ফের বেড়েছে দৈনিক মৃত্যু। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সোমবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৭৬ জনের। তবে কিছুটা কমেছে দৈনিক সংক্রমণ। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজার ৪১ জন।
করোনার কবল থেকে মুক্তি পেতে দেশজুড়ে চলছে ভ্যাকসিনেশন। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের জন্য এখনও পর্যন্ত ভারতে ৬টি ভ্যাকসিন ছাড়পত্র পেয়েছে। কিন্তু, এটাও দেখা যাচ্ছে, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে কতটা কার্যকরী করোনার ভ্যাকসিন? ভ্যাকসিন নিয়ে কতটা লাভ হচ্ছে? এর উত্তর খুঁজতে বিশ্বজুড়ে সমীক্ষা চালিয়েছে Indian Statistical Institute বা ISI.
তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রথম ডোজ নেওয়ার পর যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৯৩ শতাংশের শরীরেই করোনা ভয়াবহ আকার নেয়নি। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশের ক্ষেত্রে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে, বা হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে।
বাকি চার শতাংশকে বাঁচানো যায়নি। তবে তাঁদের বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই কোমরবিডিটি ছিল বলে দাবি করছেন গবেষকরা। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনটে বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত- একজন ভ্যাকসিন নিয়েছেন। অন্যজন নেননি। তাদের অ্যান্টিবডি টেস্ট করে দেখা গেছে - যিনি ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাঁর মধ্যে অ্যান্টিবডি অনেক বেশি। দ্বিতীয়ত যাদের করোনা হয়েছে এবং যাঁরা প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন- মোটামুটি দুজনের অ্যান্টিবডি প্রায় সমান। তৃতীয়ত - দ্বিতীয় ডোজ যারা নিয়েছে, তাদের অ্যান্টিবডি অনেক বেড়ে গেছে।
ISI-এর সমীক্ষায় উঠে এসেছে, এখনও পর্যন্ত বিশ্বে যে সমস্ত করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে তার প্রথম ডোজের কার্যকারিতা থাকছে ৮ থেকে ৯ মাস। ফলে এই সময়টা সেফ টাইম হলেও, দ্বিতীয় ডোজ না নিলে এক বছরের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবে দ্বিতীয় ডোজের কার্যকারিতা কতটা, তা জানতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
আদৌ কি প্রয়োজন পড়বে করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ? ভিন্ন মত রয়েছে চিকিৎসকমহলে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজিস্ট সৌগত ঘোষ, 'থার্ড ডোজ এখনই লাগবে কিনা বলার সময় হয়নি। আরও গবেষণা দরকার'
বেলেঘাটা আইডি-র চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরীর কথায়, 'থার্ড ডোজ দেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর্মীরা একেবারে প্রথমে ডোজ নিয়েছিলেন, সুরক্ষা কমতে শুরু করেছে, তাদের দিয়ে আবার শুরু করা উচিত।'
তবে এরইমধ্যে স্বস্তির খবর মিলেছে ‘দ্য ল্যানসেট’এ। এই মেডিক্যাল জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে, এই মুহূর্তে করোনা ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট। দুটি ডোজ নিলে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কবল থেকেও বাঁচা সম্ভব বলে দাবি করা হয়েছে গবেষণাপত্রে।