নাগপুর: কেরলের কোঝিকোড় বিমান দুর্ঘটনায় মৃত ১৮ জনের মধ্যে রয়েছেন বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন দীপক সাঠে। গতকাল ছিল তাঁর মায়ের ৮৪তম জন্মদিন। মায়ের জন্মদিনে ছেলের তাঁকে চমকে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল।
প্রয়াত পাইলটের ভাইপো যশোধন সাঠে জানিয়েছেন, দীপক ঠিক করেছিলেন, আচমকা নাগপুরের বাড়ি হাজির হয়ে মাকে অবাক করে দেবেন তিনি। গত মার্চে বাবা মায়ের সঙ্গে তাঁর শেষ দেখা হয়, তারপর থেকে তিনি বাড়ির বাইরে। তবে ফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন নিয়মিত। বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে শেষবার কথা হয় বাবা মায়ের। ক্যাপ্টেন তাঁর কয়েকজন আত্মীয়কে বলেন, বিমান পেলে ঝপ করে মায়ের জন্মদিনে একবার বাড়ি ঘুরে আসবেন। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল কোঝিকোড়ের বিমান দুর্ঘটনা।
৫৮ বছরের ক্যাপ্টেন সাঠে স্ত্রীর সঙ্গে থাকতেন মুম্বইতে। তাঁদের দুই সন্তান, বড় ছেলে ধনঞ্জয় থাকেন বেঙ্গালুরুতে, গাড়ি করে কোঝিকোড় পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন তিনি। ছোট শান্তনু থাকেন আমেরিকায়, বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় তাঁর পক্ষে বাবার শেষকৃত্যে পৌঁছনো সম্ভব নয়। তাঁর মা নীলা সাঠে থাকেন নাগপুরের ভারত নগর কলোনিতে, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, স্বামী বসন্ত সাঠের সঙ্গে। করোনা অতিমারী দেখা দেওয়ার পর বাড়ির বাইরে না বার হতে বাবা মাকে বলেছিলেন দীপক।
ছেলের কথা বলতে গিয়ে নীলাদেবী বলেছেন, লেখাপড়াই হোক বা খেলাধুলো- সবার সেরা ছিলেন দীপক। দুর্দান্ত স্কোয়াশ, টেবিল টেনিস খেলতেন। ঘোড়া চালাতেনও দারুণ। দুর্লভ সোর্ড অফ অনার সম্মান পেয়েছিলেন, তিনিই প্রথম মারাঠি যিনি বায়ুসেনার ৮টি পুরস্কার পান কিন্তু বড়াই করা তাঁর ধাতে ছিল না। মা বলেছেন, তাঁর ছেলে সব সময় অন্যের সঙ্কটে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। গুজরাত বন্যার সময় সেনাকর্মীদের সন্তানদের নিজের কাঁধে বসিয়ে বাইরে নিয়ে আসেন তিনি। নীলাদেবীর বড় ছেলে বিকাশও সেনায় ছিলেন, পথ দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়।
দীপক বারবার বলত, করোনার সময় বাড়ির বাইরে বেরিও না, তোমার কিছু হলে আমার কষ্ট হবে। আর ওর সঙ্গেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল। ঈশ্বরের ইচ্ছার কাছে আমাদের কীই বা করার আছে, ৮৪ বছরের বৃদ্ধার গলা কান্নায় আটকে যায়।