নয়াদিল্লি: লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে বহু ভারতীয় সেনাকর্মীর প্রাণ চলে যাওয়ার পর দেশের ভিতরে ক্ষোভ, অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ১৯ জুন, শুক্রবার বিকেল ৫টায় সর্বদল বৈঠক ডাকলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত সোমবার রাতের হাতাহাতি, মারামারিতে চিনের তরফেও কম্যান্ডিং অফিসার সহ কমপক্ষে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যদিও কোনও গোলাগুলি চলেনি। ভারত-চিন সীমান্ত বিরোধের ইস্যুতে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশের ভিতরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গত সাতদিন ধরে চিনা সেনাবাহিনী পূর্ব লাদাখে ঢুকে বসে রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কেন চুপ, জিজ্ঞাসা করেছেন রাহুল গাঁধী। শুক্রবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে থাকবেন সব স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের সভাপতিরা। ভারত-চিন সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হবে তাঁদের। বৈঠকে পৌরহিত্য করবেন প্রধানমন্ত্রী। ট্যুইট করে একথা জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর (পিএমও)।
ভারত গতকালই জানিয়ে দিয়েছে, পূর্ব লাদাখে উত্তেজনা হ্রাসের উদ্যোগের মধ্যে চিনা সেনাবাহিনীর একতরফা এলাকাগত স্থিতাবস্থা বদলে দেওয়ার চেষ্টার ফলেই গালোয়ানে দুদেশের সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়, চিন দুতরফের উপর মহলে স্থির হওয়া বোঝাপড়া ঠিকমত পালন করলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যেত।
আজ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ গালওয়ানে সামরিক জওয়ানদের মৃত্যুর ঘটনা গভীর উদ্বেগজনক, যন্ত্রণাদায়ক বলে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, আমাদের জওয়ানরা কর্তব্য পালন করতে গিয়ে দৃষ্টান্তমূলক সাহস দেখিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ ঐতিহ্য অনুসারে নিজেদের জীবন বলিদান করেছেন। দেশ কখনও ওঁদের শৌর্য্য, বলিদান ভুলবে না। নিহত জওয়ানদের পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানাই। এই কঠিন সময়ে দেশবাসী তাঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রয়েছেন। ভারতের সাহসী বীরদের নিয়ে আমরা গর্বিত।
এদিকে চিন কট্টর অবস্থানে অনড় থেকে ভারতের দিকেই আঙুল তুলে জানিয়ে দিল, গালওয়ান উপত্যকা বরাবর তাদেরই। চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানের দাবি, ভারতীয় বাহিনীই সীমান্ত সংক্রান্ত ইস্যুতে স্থির হওয়া প্রটোকল ও দুপক্ষের কম্যান্ডার পর্যায়ে ঠিক হওয়া ঐকমত্য ভীষণ ভাবে লঙ্ঘন ও ভুলচুক করেছে। তিনি আরও বলেছেন, আমরা আর সংঘর্ষ চাই না। সামরিক ও কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছি আমরা। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, সেটা খুব স্পষ্ট। সেদিনের ঘটনাটি হয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) চিনের জমিতে, এজন্য চিনকে দোষ দেওয়া যাবে না। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতকে বলছি, সামনের সারির বাহিনীকে শৃঙ্খলা মেনে চলতে বলুক, নাক গলানো, প্রোঅ্যাকটিভ কাজকর্ম থামিয়ে চিনের সঙ্গে থাকুক, আলাপ-আলোচনা, কথাবার্তার মাধ্যমে মতবিরোধ মিটিয়ে ফেলার সঠিক রাস্তায় ফিরুক।