লেহ্: শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হিংসাত্মক আকার ধারণ করেছিল সকালেই। বিকেল গড়াতে গড়াতে বেশ কয়েক জনের প্রাণ চলে গেল লাদাখে। রাজ্যের স্বীকৃতি চেয়ে লাগাতার আন্দোলন চলছে লাদাখে। বুধবার সেই আন্দোলন চরম আকার ধারণ করল সেখানে। এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে চার জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহত প্রায় ৭০ জন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কার্ফু জারি হল লেহ্-তে। (Ladakh Protest)
রাজ্যের স্বীকৃতি চেয়ে লাগাতার আন্দোলন চলছে লাদাখে। জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুক-সহ বেশ কয়েকজন অনশনও করছেন। এতদিন আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ভাবে চললেও, মঙ্গলবার থেকে সেখানে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। দু’জন অনশনকারীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এর পরই বুধবার বনধের ঘোষণা করে Leh Apex Body. (Ladakh Protest)
আর সেই বনধ চলাকালীনই এদিন পরিস্থিতি তেতে ওঠে। শত শত মানুষ রাস্তায় নামেন এদিন। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার কেন ঢিলেমি করছে, সেই প্রশ্ন নিয়ে বিজেপি-র দফতর ঘেরাও করেন। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায় বিক্ষোভকারীদের। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে, লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদে হটানোর চেষ্টা করে পুলিশ। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁটবৃষ্টি হয়, আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
আর সেই খণ্ডযুদ্ধের মধ্যেই চার জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে খবর। ৭০ জনের বেশি আহত হয়েছেন এখনও পর্যন্ত। পরিস্থিতি বিবেদনা করে লেহ্ প্রশাসন কার্ফু জারি করেছে শহরে। ভারতীয় নাগরিক সংহিতার ১৬৩ ধারায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে মিটিং-মিছিল, জমায়েত। প্রশাসনের লিখিত অনুমতি ছাড়া পাঁচ জনের বেশি একত্রিত হতে পারবেন না সেখানে।
এমন পরিস্থিতিতে সোশ্য়াল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন সোনম। তিনি বলেন, “আজ আমাদের অনশনের ১৫তম দিন। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আজ লেহ্-তে হিংসা হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে, কার্যালয়ে ভাঙচুর হয়েছে, পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে। গতকাল ৩৫ দিনের অনুশনে বসা দু’জনকে সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এতেই মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বনধ ডাকা হয়, আজ হাজার হাজার মানুষ বেরিয়ে আসেন।”
সোনম আরও বলেন, “কেউ কেউ বলছেন আমাদের সমর্থক। আমি বলব, গোটা লাদাখই আমাদের সমর্থক। কিন্তু এটা যুবসমাজের ক্ষোভ, Gen Z-দের বিপ্লব বলা যায় একরকম ভাবে। পাঁচ বছর ধরে বেকার, শুধু বাহানা শুনতে হচ্ছে, চাকরি দেওয়া হচ্ছে না, লাদাখকে সংরক্ষণ দেওয়া হচ্ছেন না। যুবসমাজকে বেকার করে রাখা, গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া, ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত না করা…বার বার বলে আসছি, এভাবেই সমাজে অশান্তির সৃষ্টি হয়।”
বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে সোনম আরও বলেন, “লাদাখের যুবসমাজের কাছে আবেদন, পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন, হিংসার রাস্তায় হাঁটবেন না। এতে গত পাঁচ বছরের লড়াই, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, অনশন ব্যর্থ হবে। হিংসা আমাদের রাস্তা নয়। হাতজোড় করে বলছি, শান্তিপূর্ণ ভাবে দাবিদাওয়া জানান, সরকারকেও বলব, শান্তির বার্তা শুনুন। বার বার মোট পাঁচ বার অনশন, লেহ্ থেকে দিল্লি পদযাত্রা, সাড়া না দিলে এমনই হয়। সরকারকে বলব, সংবেদনশীল হোন। গোটা দেশকে বলব, হিংসার রাস্তা আমার দেখানো নয়। যুবসমাজকে বলব, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করুন। এটা ক্ষোভ প্রকাশের সময় নয়। শান্তিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনার সময় এটা।”
২০১৯ সালের অগাস্ট মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য সংরক্ষিত অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহার করে কেন্দ্র। উপত্যকাকে ভেঙে দু'টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর এবং লেহ্-র জন্ম হয়। এই ব্যবস্থা সাময়িক, জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে রাজ্যের স্বীকৃতি ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে সেই সময় জানানো হলেও, এত বছর পরেও জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ রাজ্যের স্বীকৃতি ফিরে পায়নি। ষষ্ঠ তহবিলের অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি লাদাখকে। সেই দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চলছিল, যা এদিন চরম আকার ধারণ করে।