নয়াদিল্লি: লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের নেপথ্যে ইজরায়েল যোগ উঠে এসেছে। এবার এই ঘটনায় নাম জড়াল এক ভারতীয় অভিবাসীরও। কেরলের ওয়েনাডে জন্মানো ৩৭ বছর বয়সি রিনসন হোসে বর্তমানে নরওয়ের নাগরিক। বুলগেরিয়ায় তাঁর সংস্থাই লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হেজবোল্লাকে বিস্ফোরকযুক্ত ওই পেজারগুলি সরবরাহ করেছিল বলে জানা যাচ্ছে। (Lebanon Pager Explosions)
তাইওয়ানের Gold Apollo সংস্থার কাছে ৫০০০ পেজার তৈরির বরাত যায়। চলতি বছরের গোড়ার দিকে পেজারগুলি হাতে পায় হেজবোল্লা। ওই ৫০০০ পেজারের মধ্যে সম্প্রতি একসঙ্গে ৩০০০ পেজারে বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে ১২ জন মারা যান, আহত হন প্রায় ৩০০০ মানুষ। হেজবোল্লার হাতে ওই পেজারগুলি পৌঁছনোর আগে, ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা Mossad তাতে কারিকুরি ঘটায় বলে অভিযোগ। (Rinson Jose)
এখনও পর্যন্ত যে অভিযোগ সামনে এসেছে, সেই অনুযায়ী, প্রত্যেকটি পেজারে তিন গ্রাম করে বিস্ফোরক, একটি করে চিপ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সেই চিপ থেকে সঙ্কেত পৌঁছে যায় Mossad-এর কাছে। এর পর আচমকাই তেতে ওঠে পেজারের ব্যাটারি এবং তীব্র শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।
এই ঘটনায় তাইওয়ানের ওই সংস্থা জানিয়েছিল, AR-924 মডেলের পেজারগুলি তারা তৈরি করেনি। BAC Consulting KFT নামের ইউরোপের এক সংস্থাই সেগুলি তৈরি এবং সরবরাহ করে। শুধুমাত্র তাদের সংস্থার নাম ব্যবহৃত হয়েছিল পেজারগুলিতে। তদমন্তে নেমে জানা যায়, BAC Consulting KFT সংস্থাটি হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অবস্থিত। Gold Apollo সংস্থার ট্রেডমার্ক ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে তাদের কাছে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার বুলগেরিয়ার সরকারি সংস্থা DANS জানায়, দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলে Norta Global Ltd নামের একটি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। ২০২২ সালে সোফিয়ায় ওই সংস্থাটির নাম সরকারি খাতায় নথিবদ্ধ হয়। নরওয়ের বাসিন্দা রিনসন হোসে সংস্থার মালিক। Norta Global সংস্থাটি গতবছর আয়ব্যয়ের যে হিসেব প্রকাশ করে, তাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাইরের ব্যবসা থেকে ৬ কোটি টাকা আয় দেখানো হয়। শুক্রবার DANS জানায়, আসলে ওই পেজারগুলি বুলগেরিয়ায় তৈরিও হয়নি, সেখান থেকে রফতানিও করা হয়নি। সন্ত্রাস বা নাশকতা সরঞ্জামের ব্যবসা নিয়ে কড়া আইন রয়েছে দেশে। ওই সংস্থা সেই আইন লঙ্ঘন করেনি।
এর পর নরওয়ের ওসলো পুলিশ জানায়, রিনসনের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে তারা। জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য নরওয়ে যাত্রা করেন রিনসন। কিছুদিন লন্ডনে কাজ করে আবারও ওসলো ফিরে যান। নরওয়ের সংবাদ সংস্থা DN Media-তে ডিজিটাল কাস্টমার সাপোর্ট বিভাগে যোগ দেন রিনসন। ওই সংবাদ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, মঙ্গলবার থেকে কাজের জন্য বিদেশে রয়েছেন রিনসন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
রিনসনের পরিবার জানিয়েছে, স্ত্রীর সঙ্গে ওসলোয় থাকেন রিনসন। লন্ডনে থাকেন তাঁর যমজ ভাই। রোজ বাড়িতে কথা হতো। কিন্তু গত তিন দিন ধরে যোগাযোগ নেই রিনসনের সঙ্গে। যদিও পরিবারের দাবি, রিনসন অত্যন্ত সোজাসাপটা মানুষ। তাঁর উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে সকলের। কোনও অন্যায় কাজে তিনি যুক্ত থাকতে পারেন না। কোনও ভাবে লেবানন বিস্ফোরণ কাণ্ডে তিনি ফেঁসে গিয়ে থাকবেন বলেও মত পরিবারের। তহবে রিনসনের স্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে খবর।